সরস্বতীপূজা
১. পুজোর উপাদান যা যা প্রয়োজন:
সরস্বতী পুজোর জন্য কিছু বিশেষ উপাদানের প্রয়োজন,যা না থাকলে কিন্তু পুজো অসমাপ্ত হবে।তাই একবার ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিন পুজোয় কি কি উপাদান প্রয়োজন :
একটি সরস্বতী দেবীর মূর্তি,সাদা কাপড়,ফুল(পলাশ ফুল),আম্রপত্র, বেলপাতা,কাঁচা হলুদ,সিঁদুর,চাল,ধান,দূর্বা,ফল পাঁচ ধরনের(কলা এবং নারকেল আবশ্যক),কলস,সুপুরি,পানপাতা,ধুপকাঠি,প্রদীপ,দুধ,খাগের কলম এবং দোয়াত।বই এবং হারমোনিয়াম বা অন্য বাদ্যযন্ত্র যদি বাড়িতে থাকে তাও সামনে রাখুন।
২. সকালের নিয়ম
সরস্বতী পুজোর দিন সকাল বেলা উঠে স্নান করার নিয়ম।পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার জন্য সকালে স্নান করা আবশ্যক।স্নানের জলে নিমপাতা ও তুলসী পাতা দেওয়ার নিয়ম আছে।এতে জলের শুদ্ধিকরণ ঘটে।এছাড়া স্নান করার আগে মুখে এবং গায়ে নিম ও কাঁচা হলুদ বাটা মাখতে হয়।এতে আমাদের দেহের শুদ্ধিকরণ ঘটে এবং শরীরের কোনো রকম ইনফেকশন থেকেও এই মিশ্রণ রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে।স্নান করার পর যে পুজো করবে তাকে সাদা বা হলুদ বস্ত্র পরিধান করতে হয়।
৩. মূর্তি এবং কলস স্থাপন
প্রথমে পুজোর জায়গাটি ভালো করে পরিষ্কার করে মুছে নিয়ে একটি ছোট জলচৌকি বসাতে হবে।তবে এটি আবশ্যক নয়।এরপর একটি পরিষ্কার সাদা কাপড় পেতে দিতে হবে তার ওপর।এবার দেবী সরস্বতীর মূর্তিটি এর ওপর স্থাপন করতে হবে।দেবী মূর্তিকে ফুলের মালা পরিয়ে সুসজ্জিত করে এবং পুজোর স্থানে ভালো করে হলুদ,সিঁদুর এবং চাল দিয়ে আলপনা দিতে হবে।এছাড়া স্থানটি ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিতে হবে।বই,খাতা,পেন,পেন্সিল এবং হারমোনিয়াম ঠাকুরের মূর্তিটির পাশে রাখতে হবে,এবং সেখানেও ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিতে হবে।কালির দোয়াতগুলি দুধ দ্বারা পূর্ণ করতে হবে এবং তাতে খাগের কলমগুলি রাখতে হবে।এই কালির দোয়াতগুলি ঠাকুরের মূর্তির সামনেই রাখতে হবে।এবার কলস বা ঘট জল পূর্ণ করে তাতে প্রথমে আমের পল্লব রাখতে হবে।তার ওপর পানপত্র রেখে একটি সুপুরি রাখতে হবে।এর ওপর ফুল ও দূর্বা রাখতে হবে।দেবী মূর্তির পাশে একটি গণেশ ঠাকুরের মূর্তি রাখতে হবে।
৪. পূজারম্ভ
প্রথমে ফুল ও বেলপাতা নিয়ে গণেশ ঠাকুরের চরণে তা অর্পণ করে পূজারম্ভ করতে হবে।তারপর একই ভাবে ফুল ও বেলপাতা একে একে বাগদেবীর চরণে অর্পণ করে পুজো আরম্ভ করতে হবে।এর সাথে দেবীকে আরাধনার মন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে।এই মন্ত্রগুলির জন্য নির্দিষ্ট বই আছে যেখানে পুজোর সমস্ত নিয়ম আপনি জানতে পারবেন।এর পর ধুপ ও দীপ জেলে ফল,মিষ্টি ও নৈবিদ্য অর্পণ করে এবং সব শেষে পুষ্পাঞ্জলি দিতে হবে।
পুজো শেষ করে তবেই কিন্তু জল এবং খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।আর ঐদিন কিন্তু পড়াশোনা একদম বন্ধ।আর প্রসাদ হিসেবে ওই দিনের খাবার কিন্তু ফল,খই,মুড়কি,মিষ্টি,খিচুড়ি,লাবড়া ইত্যাদি।পুজোর বাকি মন্ত্রের জন্য কিন্তু প্রয়োজন হবে পুজোর পাঁচালি,যা আপনি সহজেই পেয়ে যাবেন।
৫. দ্বিতীয় দিনের পুষ্পাঞ্জলি ও দধিকর্মা
পুষ্পাঞ্জলি
পুজোর পরের দিন সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে পুজোয় ব্যবহৃত বেলপাতায় খাগের কলমগুলি দুধে চুবিয়ে ‘ওম সরস্ব্ত্যই নমঃ’ লিখতে হবে তিনবার।তারপর ফুল ও বেলপাতা সমেত পুষ্পাঞ্জলি দিতে হবে।এর পর ঠাকুরের নৈবিদ্যের খই,দই এবং মিষ্টি দ্বারা গোল মন্ডের মত আকারের প্রস্তুত করতে হবে একটি প্রসাদ যা অত্যন্ত উপাদেয় এবং এই প্রসাদ খাওয়ার জন্য কিন্তু বাড়ির ছোট বড় সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।একে দধিকর্মা বলা হয়।এরপর বই খাতাগুলি সরিয়ে নেওয়া যায়।পুজোর ফুল বেলপাতা সাধারণত আমরা বইয়ের পাতায় রেখে থাকি আশীর্বাদ স্বরূপ।এরপর কিন্তু দেবীর আশীর্বাদ নিয়ে দেবী মূর্তিটিকে বিসর্জন দেওয়া হয়ে থাকে।দেবী মূর্তি সাধারণত সন্ধ্যেবেলায় বিসর্জন দেওয়া হয়।অনেক বাড়িতেই কিন্তু দেবীমূর্তিটি রেখে দেওয়া হয়।পরের বছর নতুন ঠাকুর আনার পর পুরনো মূর্তি বিসর্জন দেওয়া হয়।
এই চারটি মূল নিয়ম বাগদেবীর আরাধনার।ওইদিন গান বাজনা ও আলোয় ঝলমল করে ঠাকুরের আসন।দেবীর আরাধনায় আমাদের মনের সমস্ত অন্ধকার দূর হয় এবং শিক্ষার আলোয় আমাদের শুভবোধের উদয় হয়।
পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্রঃ(৩ বার পাঠসহ)
ওঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
নমঃভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।
বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ।।
এস স-চন্দন পুষ্পবিল্ব পত্রাঞ্জলি সরস্বতৈ নমঃ।।
প্রনাম মন্ত্রঃনমো সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে।।
জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমহস্তুতে।।
সরস্বতীর স্তবঃ
শ্বেতপদ্মাসনা দেবী শ্বেত পুষ্পোপশোভিতা।
শ্বেতাম্ভরধরা নিত্যা শ্বেতাগন্ধানুলেপনা।।
শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা।
শ্বেতবীণাধরা শুভ্রা শ্বেতালঙ্কারবভূষিতা
বন্দিতা সিদ্ধগন্ধর্ব্বৈর্চ্চিতা দেবদানবৈঃ।
পূঝিতা মুনিভি: সর্ব্বৈঋষিভিঃ স্তূয়তে সদা।।
স্তোত্রেণানেন তাং দেবীং জগদ্ধাত্রীং সরস্বতীম্।
যে স্মরতি ত্রিসন্ধ্যায়ং সর্ব্বাং বিদ্যাং লভন্তি তে।।
No comments:
Post a Comment