হিন্দুধর্মের আলো,এই ব্লগ সাইটটি হিন্দু (সনাতন) ধর্মের একটি পুর্নাঙ্গ ওয়েব পোর্টাল গড়ার প্রচেষ্টায় কাজ করছে। এই সাইটের মূল উদ্দেশ্য হলো হিন্দুধর্মের প্রচার। এই ব্লগ সাইটটি হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্র সম্পর্কিত বিভিন্ন মন্ত্র, বিভিন্ন পূজা-অর্চনা, আরতি, ধ্যান,দশবিধ সংস্কার, তিলক,আরাধনা,বিভিন্ন ব্রত পালনসহ বিস্তারিত জানতে পারবেন।এই সাইটি বড় তথ্যের ভান্ডার করতে কিছু পোস্ট ফেসবুক ও ব্লগ থেকে সংগ্রহ করা হয়ে। এই ব্লগ পোস্ট সমূহ নিয়মিত শেয়ার করে হিন্দুধর্ম প্রচার বৃদ্ধিতে সাহায্য করবেন।

বিভিন্ন আরতি কীর্তন

বিভিন্ন প্রয়োজনীয়  আরতি কীর্তন 



আরতি কি?
“আ” অর্থে ব্যাপ্তি; “রতি” অর্থে প্রেম, ভালাবাসা ও অনুরাগ। যে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রীভগবানের নিজের প্রীতি বর্ধিত হয় অর্থাৎ তিনি ভক্তের প্রতি প্রসন্ন বা সন্তুষ্ট হন এবং ভগবানের প্রতিও ভক্তের প্রেম, প্রীতি, ভালবাসা, ভক্তি ও অনুরাগ বৃদ্ধি পায় তাকে আরতি বলে।অতএব আরতি ভগবানের প্রতি ভক্তের অন্তরের গভীর ভাবভক্তি পূর্ণ একটি মহা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান। ভগবানের প্রতি ভক্তের অন্তরের ভাব ও ভক্তির মাধ্যমে, আকুলতা-ব্যাকুলতা প্রকাশের মাধ্যমে ও সম্পূর্ণ আত্মনিবেদনের মাধ্যমে, আরতির অনুষ্ঠান হয় সার্থক ওসুন্দর। ভাব ও ভক্তি শূন্য আরতি তাই কেবল নাচানাচি বা অঙ্গবিক্ষেপ ছাড়া অন্য কিছু নয়। আর ওরকম আরতির মাধ্যমে ভগবানের আশীর্বাদ পাওয়া যায় না কিছুই।ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা যুগাচার্য স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ বলেছেন, আন্তরিক ভাবভক্তি নিয়ে প্রতিদিন পূজারতির মাধ্যমে আমার শক্তি সকলের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। গুরু শক্তি লাভের ইহা একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়।শাস্ত্রীয় পূজার বিধান সহজ নয় বরং জটিলও বলা যায়। কিন্তু আরতির অনুষ্ঠান খুবই সহজ সাধ্য। কারণ আরতির অনুষ্ঠান কেবল মাত্রভাব ও ভক্তির মাধ্যমে সুসম্পন্ন হয়। যারা শাস্ত্রীয় পূজার বিধি ও মন্ত্র জানেন না তারা ভক্তি ভাবের সাথে একমাত্র আরতির মধ্য দিয়ে সকল পূজার ফল লাভ করতে পারেন। তাই ভাব ও ভক্তি পূর্ণ আরতির অনুষ্ঠান হলো সকল পূজার সার।শাস্ত্রীয় পূজা যদি বিধিহীন ও মন্ত্রহীন হয়, তবে ভক্তি পূর্ণ আরতির মধ্য দিয়ে তা সম্পূর্ণতা লাভ করে। এ প্রসঙ্গে দেবাদিদেব শিব, দেবী পার্বতীকে বলেছেন-“মন্ত্রহীনং ক্রিয়াহীনং যৎকৃতং পূজনং হরেঃ।সর্ব্বং সম্পূর্ণতামেতি কৃতে নীরাজনে শিবে ॥”অর্থঃ হে দেবী পার্বতী, শ্রীভগবানের পূজা যদি মন্ত্রহীন ও ক্রিয়াহীন হয়, তবে নীরাজন বা আরতির মাধ্যমে তা সম্পূর্ণতা লাভ করে।নানা উপচারে আরতির অর্থ জানা দরকারঃপূর্বে বলা হয়েছে- শ্রীভগবানের প্রতি, সদ্গুরুর প্রতি অর্থাৎ আরাধ্য দেবতার প্রতি ভক্তের আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভক্তি নিবেদনের মাধ্যমে আরতির অনুষ্ঠান হয় সার্থক। কিন্তু সাধারণ নরনারীর তীব্র আসক্তি বিষয়ের প্রতি, ভোগবিলাসের প্রতি, কামনা ও বাসনার প্রতি। সেই বিষয়াসক্তি ত্যাগের জন্যই তো করতে হয় পূজা-আরতির বিশেষ অনুষ্ঠান। শাস্ত্রে বলা হয়েছে, এ বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে পাঁচ প্রকার উপাদান থেকে। তা হলো- ক্ষিতি (মাটি), অপ্ (জল), তেজ (অগ্নি), মরুৎ (বায়ু), ও বোম্ (আকাশ)। উল্লিখিত ৫ (পাঁচ) প্রকার উপাদান আরতির মাধ্যমে শ্রীভগবানকে উৎসর্গ করলে, আর কিছু নিবেদন করতে বাকী থাকে না। মানুষের পাঁচ প্রকার ইন্দ্রিয়, পাঁচ প্রকার বিষয় ভোগের প্রতি আকৃষ্ট হয়। যেমনঃ নাসিকা- গন্ধের প্রতি। চোখ- রূপের প্রতি। জিহ্বা- রসের প্রতি। কান- শব্দের প্রতি। ত্বক (গাত্রচর্ম)- স্পর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয় অর্থাৎ বিষয় ভোগের প্রতি আকৃষ্ট হয়।আরতির উপচার ভগবানের উদ্দেশ্যে, সদ্গুরুর উদ্দেশ্যে নিবেদনের মাধ্যমে উল্লিখিত পাঁচ প্রকার ইন্দ্রিয়ের, পাঁচ প্রকার বিষয়ভোগের আসক্তি হতে মুক্ত হওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করতে হয়। প্রণব মঠ ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ- এর আরতির নিয়মে বলা যায়-(১) ধূপ বা ধূপতি মাটি বা গন্ধের প্রতীক স্বরূপ।ধূপ বা ধূপতির মাধ্যমে, আরতি ক’রে সদ্গুরুর নিকট নাসিকা (নাক) ইন্দ্রিয়ের ভোগ বাসনার (বহির্জগতের গন্ধ যেমন- নানা প্রকার সুগন্ধি কস্মেটিক দ্রব্যাদি) প্রতি আকর্ষণ মুক্ত হতে পারি- সেই প্রার্থনা জানাতে হয়। পক্ষান্তরে পবিত্র পূজার ধূপ, ধূনা, কর্পূর প্রভৃতির গন্ধে খুশি থাকতে পারি সেই পার্থনা করতে হবে।(২) পঞ্চ প্রদীপ তেজ বা অগ্নির প্রতীক, রূপের প্রতীক।পঞ্চ প্রদীপ দিয়ে আরতির মাধ্যমে, সদ্গুরুর নিকট চক্ষু ইন্দ্রিয়ের ভোগ বাসনার (বহির্জগতের রূপ দর্শন যেমন- অচিত্র, কুচিত্র, খারাপ দৃশ্য ইত্যাদি) প্রতি আকর্ষণ মুক্ত হতে পারি- সেই প্রার্থনা জানাতে হয়। আরও প্রার্থনা জানাতে হয়, “হে ঠাকুর তোমারই রূপ দর্শনে যেন ধন্য হতে পারি।”(৩) জলশঙ্খ অপ্ বা জলের প্রতীক, রসের প্রতীক।জল শঙ্খ দিয়ে আরতি ক’রে সদ্গুরুর নিকট জিহ্বা ইন্দ্রিয়ের ভোগ বাসনা (যেমন- মাছ, মাংস প্রভৃতি খাদ্য দ্রব্য; মদ, বিড়ি, সিগারেট বা অন্যান্য মাদক দ্রব্য) থেকে আসক্তি মুক্ত হতে পারি সেই প্রার্থনা জানাতে হয়। সেই সাথে প্রার্থনা করতে হয়, “হে ঠাকুর, তোমার প্রতি নিবেদিত পবিত্র প্রসাদ গ্রহণ ক’রে যেন জীবনকে ধন্য করতে পারি।”(৪) চামর ও পাখা মরুৎ বা বায়ুর প্রতীক, স্পর্শ সুখের প্রতীক।চামর ও পাখা দিয়ে আরতির মাধ্যমে সদ্গুরুর নিকট ত্বক ইন্দ্রিয়ের ভোগ বাসনা (নর-নারীর একে অপরের প্রতি কু-বাসনা নিয়ে শরীরস্পর্শ করা- বহির্জগতের স্পর্শের প্রতীক) হতে আসক্তি মুক্ত হতে পারি- সেই প্রার্থনা জানাতে হয়। সেই সাথে আরও প্রার্থনা করতে হয়, “হে ঠাকুর, তোমার শ্রীচরণ অভিষেক ক’রে, স্পর্শ ক’রে, যেন জীবনকে ধন্য করতে পারি।”(৫) বিভিন্ন প্রকার বাদ্যযন্ত্রের শব্দ বোম্ বা আকাশের প্রতীক।ঘণ্টা, ঢাক, কাসর প্রভৃতি বাজিয়ে আরতি করার মাধ্যমে সদ্গুরুর নিকট কর্ণ ইন্দ্রিয়ের ভোগ বাসনা (বহির্জগতের খারাপ শব্দ, পরনিন্দা, সমালোচনা, কু-সঙ্গীত প্রভৃতি শোনার আসক্তি) হতে মুক্ত হতে পারি- সে প্রার্থনা জানাতে হয়।
সেই সাথে আরও প্রার্থনা করতে হয়- “হে ঠাকুর, তোমার পবিত্র ভজন সঙ্গীত শুনে, তোমার গুণগান শুনে, যেন জীবনকে ধন্য করতে পারি।”(৬) ত্রিশূল, তরবারি, চক্র প্রভৃতি শক্তির প্রতীক। ভিতর ও বাইরের শত্র“ দমনের প্রতীক।তাই ত্রিশূল দিয়ে বা অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে আরতি করার মাধ্যমে- ভেতরের শত্র“ (কাম, ক্রোধ, লোভ প্রভৃতি রিপু ও ইন্দ্রিয়েরবিষয়াসক্তি বা ভোগ বিলাসের আসক্তি) থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সদ্গুরু ভগবানের নিকট আন্তরিক প্রার্থনা জানাতে হবে। সেই সাথে বাইরের শত্র- দুষ্ট, দূর্বৃত্ত, অত্যাচারীদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য অর্থাৎ আত্মরক্ষা করার জন্য অস্ত্র চর্চাকরারও অভ্যাস করতে হবে।(৭) পুষ্প বা ফুল ভক্তি ও আত্মনিবেদনের প্রতীক।তাই পুষ্প পাত্র দিয়ে আরতি নিবেদনের মাধ্যমে শ্রীগুরু ভগবানের নিকট প্রার্থনা জানাতে হবে “হে আমার প্রাণের ঠাকুর, আমার এই জীবন কুসুমটিও তোমারই শ্রীপাদপদ্মে ভক্তি অর্ঘ্য রূপে উৎসর্গ করলাম। তুমি কৃপা পূর্বক গ্রহণ ক’রে এই দীন সন্তানকে আশীর্বাদ করো। যেন আমার জীবনকে ফুলের মত পবিত্র করতে পারি অর্থাৎ সৎ চরিত্রবান হতে পারি।”এভাবে উল্লিখিত সমস্ত উপচারের আরতির মাধ্যমে- গন্ধ, রূপ, রস, শব্দ, স্পর্শ প্রভৃতি ইন্দ্রিয়গুলির বিষয় আসক্তি দূর ক’রে- শ্রীগুরু ভগবানের প্রতি সম্পূর্ণ আত্মনিবেদন করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ভগবানের প্রতি ভক্তের আত্মনিবেদনের মাধ্যমে- ভক্তের মধ্যে জাগ্রত হয় শুদ্ধ, পবিত্র ভগবদ্ভক্তি। আর শুদ্ধ, পবিত্র ভগবদ্ভক্তির মাধ্যমে ভক্ত জন্মজন্মান্তরীণকামনা-বাসনা থেকে মুক্ত হয়ে পরম শান্তি লাভে ধন্য ও কৃতার্থ হয়।সংক্ষেপে এই হলো আরতি তত্ত্ব বা আরতি-মাহাত্ম্য।

মহাপ্রভুর ভোগ আরতি:
ভজ পতিত উদ্ধারণ শ্রীগৌরহরি ।
 শ্রীগৌরহরি নবদ্বীপ বিহারী ।
দীন দয়াময় হিতকারী । ।
এস এস মহাপ্রভু করি নিবেদন।
শান্তিপুরে মোর গৃহে কর আগমন।।
প্রভু লয়ে সীতানাথ করিলেন গমন।
মধ্যাহ্ন সময়কালে প্রভুর আগমন।
অদ্বৈত গৃহিণী আর শান্তিপুর নারী।।
উলুধ্বনি দেয় সবে গোরা মুখ হেরি।।
বসিতে আসন দিলা রত্ন সিংহাসন।
সুশীতল জলে কৈলা পাদ প্রক্ষালন।।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু কর অবধান।
ভোগ মন্দিরে প্রভু করহ পায়ান।।
বামেতে অদ্বৈত প্রভু দক্ষিণে নিতাই।
মধ্যাসনে বসিলেন চৈতন্য গোঁসাই।।
শাক শুকতা ভাজি দিয়ে সারি সারি।
ভোগের উপর দিল তুলসী মঞ্জরী।।
গঙ্গাজল তুলসী দিয়া ভোগ কৈল নিবেদন।
আনন্দে ভোজন করেন শ্রীশচীনন্দন।।
দধি দুগ্ধ ঘৃত ছানা নানা উপহার।
আনন্দে ভোজন করেন শচীর কুমার।।
মালপোয়া সর ভাজা আর লুচিপুরী।
আনন্দে ভোজন করেন নদীয়াবিহারী।।
নিতাই রাঙ্গিয়া মোর খাইতে খাইতে।
ভাল ভাল বলি তুলি দেয় গৌরাঙ্গ মুখেতে
না জানিয়ে পরিপাটি না জানি রন্ধন।
শুখা রুখা এক মুষ্টি করহ ভোজন।।
খাইতে খাইতে প্রভুর ভাবাবিষ্ট মন।
রাধাকুণ্ডের ভোজন লীলা হইল স্মরণ।।
ভজ গোবিন্দ মাধব গিরিধারী।
জয় গিরিধারী গোবর্দ্ধনধারী।।
কেলি কলারস মনোহারী।।
রতন মন্দির ঘর রত্নের আসন।
তার মধ্যে বৃন্দাদেবী করিল সাজন।।
রতন থালিতে ভোগ করি সারি সারি।
ফল আদি নানা দ্রব্য কহিতে না পারি।।
অমৃতকেলি ক্ষীর পুরী আর শিখারিণী।
দধি দুগ্ধ ঘৃত ছানা মণ্ডা সর ননী।।
রতন আসন পর বৈঠাল কান।
ভোজন কয়ন আপন মন মান।।
আচমন সারি তলপে মুখবাস।
ভোজন করূ ধনী সখীগণ পাশ।।
যো কছু ভুঞ্জল সখীগণ সাথ।
আচমন কয়ল মুছল পদ হাত।।
শ্যাম বামে ধনী বসিলেন যাই।
প্রিয় নম্র সখিগন তাম্বূল যোগাই।।
রতন পালঙ্ক পরি করিল শয়ন।
নির্ম্নঞ্ছন দিয়া সেবে কুঞ্জদাসীগণ।।
পুষ্পশয্যা পরি দুহঁ শ্রীরাধাগোবিন্দ।
নিকুঞ্জের দ্বারে দেখে যত সখীবৃন্দ।।
জয় জয় শব্দ করে শুক শারী।
নরোত্তম দাস হেরে ও রুপ মাধুরী।।
ভোজনের অবশেষ কহিতে না পারি।
সুবর্ণ ভৃঙ্গারে দিল সুবাসিত বারি।।
ভোজন সারিয়া প্রভু কৈল আচমন।
সুবর্ণ খড়িকায় কৈল দন্ত শোধন।।
আচমন করিয়া প্রভু বসিলেন সিংহাসনে
কর্পূর তাম্বূল যোগায় প্রিয় ভক্তগণে।।
তাম্বূল খাইয়া প্রভুর পালঙ্কে শয়ন।
গোবিন্দ দাস করে পাদ সম্বাহন।।
ফুলের চৌয়ারি ঘর ফুলের কেওয়ারি।
ফুলের রত্ন সিংহাসন চাঁদোয়া মশারি।।
ফুলের পাপড়ি প্রভুর উড়ে পড়ে গায়।
তার মধ্যে মহাপ্রভু সুখে নিদ্রা যায়।।
স্বেদ বিন্দু ঝরে মহাপ্রভুর গায়।
নরহরি গদাধর চামর ঢূলায়।।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু দাসের অনুদাস।
সেবা অভিলাষ মাগে নরোত্তম দাস।।
~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~ ~

ভোগ-আরতি:
ভজ ভকতবৎসল শ্রীগৌরহরি।
শ্রীগৌরহরি সোহি গোষ্ঠবিহারী,
নন্দ-যশোমতী-চিত্তহারী।।১।।
বেলা হলো দামোদর, আইস এখন।
ভোগ-মন্দিরে বসি’করহ ভোজন।।২।।
নন্দের নির্দেশে বৈসে গিরিবরধারী।
বলদেব-সহ সখা বৈসে সারি সারি।।৩।।
শুকতা-শাকাদি ভাজি নালিতা কুষ্মান্ড।
ডালি ডালনা দুগ্ধতুম্বী দধি মোচাখন্ড।।৪।।
মুদগবড়া। মাষবড়া রোটিকা ঘৃতান্ন।
শঙ্কুলী পিষ্টক ক্ষীর পুলী পায়সান্ন।।৫।।
কর্পূর অমৃতকেলী রম্বা ক্ষীরসার।
অমৃত রসালা, অম্ল দ্বাদশ প্রকার।।৬।।
লুচি চিনি সরপুরী লাড্ডু রসাবলী।
ভোজন করেন কৃষ্ণ হয়ে কুতহলী।।৭।।
রাধিকার পক্ক অন্ন বিবিধ ব্যঞ্জন।
পরম আনন্দে কৃষ্ণ করেন ভোজন।।৮।।
ছলে-বলে লাড্ডু খায় শ্রীমধুমঙ্গল।
বগল বাজায়, আর দেয় হরিবোল।।৯।।
রাধিকাদি গণে হেরি’ নয়নের কোণে।
তৃপ্ত হ’য়ে খায় কৃষ্ণ যশোদা-ভবনে।।১০।।
ভোজনান্তে পিয়ে কৃষ্ণ সুবাসিত বারি।
সবে মুখ প্রক্ষালিয়া যত সখাগণে।
আনন্দে বিশ্রাম করে বলদেব সনে।।১২।।
জম্বুল রসাল আনে তাম্বুল মাসালা।
তাহা খেয়ে কৃষ্ণচন্দ্র সুখে নিন্দ্রা যায়।।১৪।।
যশোমতী-আজ্ঞা পেয়ে ধনিষ্ঠা-আনীত।
শ্রীকৃষ্ণপ্রসাদ রাধা ভুঞ্জে হ’য়ে প্রীত।।১৫।।
ললিতাদি সখীগণ অবশেষ পায়।
মনে মনে সুখে রাধা-কৃষ্ণগুণ গায়।।১৬।।
হরি-লীলা একমাত্র যাঁহার প্রমোদ।
ভোগারতি গায় সেই ভকতিবিনোদ।।১৭।।


তুলসী আরতি কীর্ত্তন:
নমো নমঃ তুলসী! কৃষ্ণপ্রেয়সী!
রাধাকৃষ্ণ-সেবা পাব এই অভিলাষী।।
যে তোমার শরণ লয়, তার বাঞ্ছা পূর্ণ হয়,
কৃপা করি কর তারে বৃন্দাবন বাসী।
মোর এই অভিলাষ, বিলাষ-কুঞ্জে দিও বাস,
নয়নে হেরিব সদা যুগলরূপরাশি।।
এই নিবেদন ধর, সখীর অনুগত কর,
সেবা-অধিকার দিয়ে কর নিজ দাসী।
দীন কৃষ্ণদাসে কয়, এই যেন মোর হয়,
শ্রীরাধাগোবিন্দ-প্রেমে সদা যেন ভাসি।।


মঙ্গল আরতি:
সংসার-দাবানল-লীঢ় লোক-
ত্রাণায় কারুণ্যঘনাঘনত্বম্।
প্রাপ্তস্য কল্যাণ-গুণার্ণবস্য
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্।।১।।

মহাপ্রভোঃ কীর্তন-নৃত্য-গীত
বাদিত্রমাদ্যন্মনসো রসেন।
রোমাঞ্চ-কম্পাশ্রু-তরঙ্গভাজো
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্।।২।।

শ্রীবিগ্রহারাধন-নিত্য-নানা-
শৃঙ্গার-তন্মন্দির মার্জনাদৌ।
যুক্তস্য ভক্তাংশ্চ নিযুঞ্জতোহপি
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্।।৩।।

চতুর্বিধ-শ্রীভগবৎপ্রসাদ-
স্বাদ্বন্নতৃপ্তান্ হরিভক্তিসঙঘান্।
কৃত্বৈব তৃপ্তিং ভজতঃসদৈব
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্।।৪।।

শ্রীরাধিকামাধবয়োপার-
মাধুর্যলীলা গুণ-রূপ-নাম্নাম্।
প্রতিক্ষণাস্বাদন-লোলুপস্য
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্।।৫।।

নিকুঞ্জযুনো রতিকেলিসিদ্ধ্যৈ
যা যালিভির্যুক্তিরপেক্ষণীয়া।
তত্রাতিদাক্ষাদতিবল্লভস্য
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম্।।৬।।

সাক্ষাদ্বরিত্বেন সমস্তশাস্ত্রৈ-
রুক্তস্তথা ভাব্যত এব সদ্ভিঃ।
কিন্তু প্রভোর্যঃ প্রিয় এব তস্য
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম।।৭।।

যস্য প্রসাদাদভগবৎ-প্রসাদো
যস্যাপ্রসাদান্ন গতিঃ কুতোহপি।
ধ্যায়ংস্তুবংস্তস্য যশস্ত্রী-সন্ধ্যং
বন্দে গুরোঃ শ্রীচরণারবিন্দম।।৮।।


শ্রী শ্রী গৌর-আরতি:
জয় জয় গোরাচাঁদের আরতিকো শোভা।
জাহ্নবী-তটবনে জগমনোলোভা।।১।।
দক্ষিণে নিতাইচাঁদ, বামে গদাধর।
নিকটে অদ্বৈত, শ্রীনিবাস ছত্রধর।।২।।
বসিয়াছে গোরাচাঁদ রত্নসিংহাসনে।
আরতি করেন ব্রহ্মা-আদি দেবগণে।।৩।।
নরহরি-আদি করি’চামর ঢুলায়।
সঞ্জয়-মুকুন্দ-বাসুঘোষ-আদি গায়।।৪।।
শঙ্খ বাজে, ঘণ্টা বাজে, বাজে করতাল।
মধুর মৃদঙ্গ বাজে পরম রসাল।।৫।।
বহুকোটি চন্দ্র জিনি’বদন উজ্জ্বল।
গলদেশে বনমালা করে ঝলমল।।৬।।
শিব-শুক-নারদ প্রেমে গদগদ।
ভকতিবিনোদ দেখে গোরার সম্পদ।।৭।।


সন্ধ্যা আরতি:
ভালি গোরা চাঁদের আরতি বনি ।
বাজে সংকীর্তনের সুমধুর ধনি । ।
শঙ্খ বাজে ঘন্টা বাজে বাজে করতালও ।
মধুর মৃদঙ্গ বাজে সুনিতে রসালো । ।
বিবিধ কুসুমো ফুলে বনি বনমালা ।
শতকটি চন্দ্র প্রভুর বদনও উজ্জ্বলা । ।
ব্রহ্মা আদি দেব যাকো করজোড় করে।
সহস্রহ বদনে ফনি শিরে ছত্র ধরে।।
শিব শুক নারদ ব্যস বিহারে।
নহি প্ররাত পর ভাব বিহারে।।
শ্রী নিবাস হরি দাস মঙ্গল গায়ে।
নরহরি গদাধর  চামর ঢুলায়ে।।
বীরবলভ দাস শ্রী গৌর চরণে আস।
জগ ভরি রহল মহিমা প্রকাশ।।

Share:

No comments:

Post a Comment

Powered By Blogger

Categories

লেখক

সুমন চন্দ্র বর্মন (সাগর)
অনার্স, এম এ (ইতিহাস)
টাংগাইল, ঢাকা, বাংলাদেশ।