সিথীতে ওঁ কৃষ্ণায় নমঃ
কপালে ওঁ কেশবায় নমঃ
কণ্ঠে ওঁ গোবিন্দায় নমঃ
শঙ্খে ওঁ মধুসুদনায় নমঃ
বস্ত্রে
ওঁ মাধবায় নমঃ শিরোভূষণ সিন্দুরং ভর্ত্তুরায়ু বিবর্দ্ধনং ।৷
সর্বরত্নাকরং দিব্যং সিন্দুরং প্রতিগৃহ্যতাম্ ।।
সিঁদুর কি?
সিঁদুর (বা সিন্দূর) একপ্রকার রঞ্জক পদার্থ। এটি সাধারণত মেয়েদের সিঁথিতে একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত অবধি প্রসারিত টীকা বা কপালে টিপের আকারে ব্যবহৃত হয়। হিন্দুধর্মে সিঁদুর বিবাহিতা নারীর প্রতীক। অবিবাহিত মেয়েরা সিঁথিতে সিঁদুর পরে না, কপালে সিঁদুরের টিপ পরে। বিধবাদের সিঁদুর ব্যবহার শাস্ত্রমতে নিষিদ্ধ। হিন্দুদের পূজানুষ্ঠানের সময়ও সিঁদুর ব্যবহৃত হয়।
সিঁদুরের ইতিহাস অতি প্রাচীন বলে ধারণা করা হয়। হিন্দু ধর্মমতে এটি স্বামীর দীর্ঘজীবন বয়ে আনে বলে বিবাহিত হিন্দু নারীরা সিঁদুর ব্যবহার করেন। এর রঙ লাল, কারণ এটি শক্তি ও ভালোবাসার প্রতীক। হিন্দু বিবাহের সময়ে একজন নারীর প্রথম কপালে সিঁদুর দিয়ে চিহ্ন আঁকা হয়।
বিয়ের পর হিন্দুনারীরা সিদুঁর ব্যবহার করে কেন ???
মহারাজ শান্তুনু গঙ্গাদেবীকে বিবাহ করিবেন বলিয়া মনস্থির করিলেন।যেহেতু গঙ্গা দেবী দেবকুল এবং শান্তুনু মানবকুল তাই তাহারা উভয়েই সংকটে পড়িলেন যে,এই বিবাহের বৈধতা থাকিবে কি না!যেহেতু ব্রক্ষ্মা সকল কুলের সৃষ্টিকারী,তাই তাহারা উভয়ে ব্রক্ষ্মার শরনাপন্ন হইলেন এবং স্ময়ং ব্রক্ষ্মাও উপস্থিত হইলেন।
ব্রক্ষ্মা এ বিবাহে অস্বীকৃতি জানাইলেন।কারণ কুল,ধর্ম, বর্ন,গোত্র বিপন্ন হইলে,বিবাহের পরবর্তী সময়ে সংঘাত অনিবার্য।তখন দেবকুল রানী গঙ্গা দেবী ব্রক্ষ্মাকে একটি প্রশ্ন করিলেনঃ-"যদি দেবকুলের কোন নারী দেবকুলের কোন বরপতি খুজিঁয়া না পায়,তাহা হইলে কি সে নারী সারাজীবন অবিবাহিত থাকিবেন?" তাহা হইলে তো সমাজে অনাচার এবং সংঘাত অহরহর ঘটিতে থাকিবে,কারণ উপযুক্ত অবিবাহিত নারী স্বর্প বিষের সমতুল্য। কারণ তাহারা যে কোন সময় পরিবার,সমাজ এবং ধর্ম সকলকে আঘাত করিতে পারিবে,তাই ইহা একমাত্র বিবাহের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন সম্ভব।তখন ব্রক্ষ্মা পড়িলেন বিপাকে! ব্রক্ষ্মা তখন মহারাজ শান্তুনুকে কহিলেন, ঠিক আছে তোমরা যদি এমন একটা কিছু করিয়া দেখাইতে পার যেখানে দেহ থাকিবে দুইটা কিন্ত মন এবং প্রান থাকিবে একটা,তাহা হইলে আমি এ বিবাহের অনুমতি দিতে পারিবো।মহারাজ শান্তুনু তখন চিন্তা করিলেন,যদি দুইজনকে এক প্রানে আনিতে হয় তাহা হইলে যদি আমার রক্ত ওর দেহে প্রবেশ করাইলে আমরা উভয়েই এক প্রানের স্তম্ভ লাভ করিতে পারিবো।মহারাজ শান্তুনু সাথে সাথে নিজের বাম হস্তের বৃদ্ধাংগুলী কাটিয়া নিজ রক্ত গঙ্গা দেবীকে খাওয়ানোর জন্য উদ্যত হইলেন।ব্রক্ষ্মা ইহাতে বাঁধা প্রদান করিলেন এবং কহিলেন, আমিই জগতের সকল কুল সৃষ্টি করিয়াছি।তোমাদেরকে পৃথিবীতে এবং স্বর্গলোকে পাঠাইনো হইল শান্তি এবং ধর্ম স্থাপনের আশায়।রক্ত পান করিলে তোমাদের মধ্যে আর রাক্ষস,দৈত্য,দানব এবং অসুর কুলের মধ্যে কোন ভেদাবেদ থাকিবে না।তাই আমার মতে,তুমি গঙ্গা দেবীর শরীরে তোমার রক্ত এমন একটা জায়গায় লেপন কর, যেখানে যে কোন নারীর সর্ব্বলোকের সর্ব্ব দৃষ্টি ঐ খানে গিয়া পড়িবে।আরো মনে রাখিতে হইবে যে,তাহা কোন নারীর জীবনে মাত্র একবার রক্ত তিলক গ্রহন করিতে পারিবে এবং দ্বিতীয় বারের ইহার কোন বৈধতা থাকিতে পারিবে না।তখন মহারাজ শান্তুনু নিজের বাম হস্তের বৃদ্ধাংগুলীর রক্ত গঙ্গা দেবীর ললাটে লেপ্টাইয়া দিলেন এবং সেই থেকে হিন্দু সমাজের নারীদের ললাট রক্ত তিলকের শোভা বর্ধনে সিদুঁর ফোঁটার প্রচলন ঘটাইলো।এখানে আরো বলা বাহুল্য যে,"যেহেতু ব্রক্ষ্মা দুইজনকে এক প্রানে অধিষ্ঠিত করিয়াছিলেন এবং শান্তুনুর রক্ত প্রান গঙ্গা দেবীর শরীরে প্রবেশ করাইয়াছিলেন সেহেতু স্বামীর প্রান
প্রয়ান মানেই
স্ত্রীর প্রান
প্রয়ান ঘটিবে
বলিয়া নিশ্চিত করনে
সমগ্র ব্রক্ষ্ম সমাজে
সতীদাহ প্রথার
প্রচলন ঘটাইলেন"।সিদুঁর
স্থাপনের আরো
কিছু যুক্তিকতাঃ-
(১) কোন নারীর জীবনে কপালে সিদুঁর ১ বারেই উঠে বলিয়া বিধবা বিবাহের ক্ষেত্রে ব্রাম্মণগণ
কখনো সিদুঁর প্রদানের অনুমতি প্রদান করেন না।
(২) যাহার কপালের সিদুঁরেরর ফোঁটা যত উজ্জল থাকে তাহার প্রতি পরপুরুষের কামশক্তির দৃষ্টি তত ম্লানের দিকে ধাবিত হয়।
(৩)কপালে সিদুঁর নিয়ে চলাচল মানেই স্বামীর রক্ত নিজ শরীরে বয়ে বেড়ানো।
(৪) সিদুঁরের রং যদি লাল না হইয়া অন্য রং সৃষ্টি হইত, তাহা হইলে কখনো ইহা কপালে স্থান পাইতো না কারণ ইহা মূলত রক্ত তিলক হইতে উৎপত্তি।
(৫) সিদুঁর মূলত কালীমাতার ভয়ংকর রুপ। কারণ অসুরদের রক্ত ঝরানোর মুহুর্তে কালী মাতার শরীরে মহাদেবের রক্ত তিলক ছিলো।অসুরেরা তাই লাল রংকে বেশী ভয় পায়।তাই ইহা অসুর প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে।
No comments:
Post a Comment