গো-মাতা কেন সনাতন ধর্মে পূজনীয় ??
উত্তরঃ
আমরা হিন্দুরা নানান জায়গায়
অহিন্দুদের কাছ থেকে এই একটি প্রশ্নের
সম্মুখীন হই , তাহল আমরা গরুর দুধ খাই
ঠিকই, কিন্তু মাংস খাই না কেন??
আসুন এবার জানা যাক সনাতন ধর্মে গো
মাতা সম্পর্কে কি বলা হয়েছে>>>
পবিত্র বেদে সাত ধরণের মাতার কথা
উল্লেখ করা হয়েছে।তারা হলেন :
বেদ মাতা
ধরনী মাতা
গো মাতা
রাণী মাতা
ব্রাহ্মণ মাতা
গুরুদেবের স্ত্রী মাতা
নিজের আপন মাতা।
আমরা কিন্তু আমাদের আপন জন্মধাত্রী
মায়ের দুধ পান করতে পাড়ি , তাই বলে
কি আপন মায়ের মাংস ভক্ষন করতে
পাড়ি??
না কখনই পাড়ি না। শাস্ত্র মতে এই ৭ জন
মাতার মধ্যে গো-মাতা একজন ।
তাই আমরা গো মাতার দুধ পান করতে
পাড়ি কিন্তু মাংস ভক্ষন করতে পাড়ি না।
আর তাছাড়া গো মাতা পরমেশ্বর ভগবান
শ্রীকৃষ্ণের অতিব প্রিয়।ভগবান কৃষ্ণ তাঁর
বাল্যকালের লীলা বিলাস এই গো-
মাতাদের সাথে করেছিলেন ।
তাছাড়া বেদে গোহত্যা এবং গোমাংস
খাওয়া সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ।
সুতরাং গো মাতা হত্যা ও তাঁর মাংস
ভক্ষন করা আমাদের ধর্মে নিষিদ্ধ । গো
মাতাকে রক্ষা করাই আমাদের ধর্ম ।
কতিপয় কিছু হিন্দু আছে যারা সনাতন
শাস্ত্র সম্পর্কে কিছুই জানে না । যার
জন্য তারা অহিন্দ বন্ধুদের সাথে থেকে
আরামছে গো মাংস ভক্ষন করে ।
আর সেই সকল কুলাঙ্গার হিন্দুদের জন্য
অন্যান্য হিন্দু রা প্রশ্নবিদ্ধ হয় ।
তাই পোস্ট শেয়ার করুন যাতে সকল
সনাতনীরা জানতে পারে।
হিন্দু শ্রাস্ত্র বেদ নির্ভর। বেদ হলো ইশ্বর বাক্য। যা অলঙ্ঘনীয়। বেদ ঈশ্বর প্রদত্ত আদেশ নির্দেশনা কি করে জীবন আচরণ করবো তা মুলত স্মৃতি দ্বারা বুঝা য়ায়।।
প্রথমে আসি বেদ কি বলে?
প্র নু বোচং চিকিতুষে জনয়া,মা গামনাগা মদিতিং বধিষ্ট।।(ঋগবেদ ৮/১০১ / ১৫।)
অর্থাৎ ঈশ্বর বলছেন, আমি জ্ঞানবান কে বলছি যে তোমারা নিরপরাধ গো জাতিকে হত্যা করো না।।
এখন তথাকথিত বুদ্ধি জীবিরা বলবে এখানে হত্যা করতে নিষেধ করছে। খেতে তো নয়! আরে ভাই যাকে কাটা যাবে না তাকে খাবার তো প্রশ্ন আসে না। বেদের এই বাক্যর পূর্ন ব্যাখ্যা আছে স্মৃতি তে। যা আমাদের আদি পিতা মনু ও বাকী ১৮ জন বেদবিদ মহর্ষি গণ দ্বারা ব্যাখ্যা করা।।
আসুন দেখি কি বলে স্মৃতি-
ব্রক্ষহত্যা সুরাপানং স্তেয়ং গুর্ববঙ্গনাগমঃ।
মহান্তি পাতকান্যাহুঃ সংসর্গশ্চাপি তৈঃ সহ।।
মনু।
অর্থাৎ ব্রাম্মহত্যা (মানুষ ও গো হত্যা),মদ পান,চৌর্য, কন্যা,মাতৃ স্থানীয় নারী সংঙ্গম এই চারটি মহাপাতক। যারা এই কর্ম করে তাদের সাথে বাস করা শয়ন উপবেশন করলে সেও মহা পাপী।। তাই বলা যায় গো হত্যা নিষেধ।।
এবার আসি গোমাংসভোজী হলে কি করতে হয়?
গোমাংস ভক্ষনে প্রাজাপত্যং চরেদিতি।।
সমন্ত স্মৃতি।। অনিচ্ছা পূর্বক গো মাংস একবার ভক্ষনে প্রজাপত্য ব্রত করিবে।
গো অশ্ব বারহ কুন্জারোষ্টী চ সর্বং পন্চনখ তথা।।
ক্রব্যাদং কুক্কুটং গ্রাম্য কুর্যাৎ সংবৎসর ব্রতমিতি।।
শঙ্খ সংহিতা।। গরু, অশ্ব, শুকর, হাতি গ্রাম্য কুক্কুটাদি মাংস ভোজন করলে সম্বৎসর ব্রত করিবে।।
সুতরাং এখানে স্পষ্ট বুঝা যায় কোন কোন মাংস আমাদের খাওয়া যাবে না।।
যেহেতু বেদ ও স্মৃতি দুই গো হত্যা ও খাওয়া নিষেধ। তাই আমরা হিন্দুরা গো মাংস খাই না।।
আর কেউ যদি গো ঘাতক হয় তার শাস্তি কি?
যদি নো গাং হংসি যদ্যশ্বং যদি পুরুষম।।
তং ত্বা সীসেন বিধ্যামো যথা নোহসো অবীরহা।।(অর্থববেদ ১/ ১৬/ ৪)
আর তুমি যদি আমাদের গরু অশ্ব ও প্রজাদিগকে হিংসা করো বা হত্যা করো তবে তোমাকে সীসা দ্বারা বিদ্ধ করিব। আমাদের সমাজের মধ্যে যেন বীরদের বিনাশকারী কেহই না থাকে।। এখানে বলা হচ্ছে যদি কেউ গো ও মানব হত্যা করে ইচ্ছা করে তাকে সীসা বিদ্ধ করতে।।
গরুকে হিন্দুরা কিরুপে দেখে?
ছোট বেলায় বাড়ীর মা, ঠাকুরমাগন খুব ভোরে ঘুম থেকে গরু ঘরের গোবর ঘটিতে নিয়ে পরিস্কার জলে গুলে তা বাড়ী আঙ্গিনায় ছিটাতেন, পূজো কিংবা সন্ধ্যা আহ্নিকের জায়গা গোবর মিশানো জল ছিটানো কিংবা ঘরের ভিটি লেপন করতেন,আসলে গোবর জল ছেটাবার জন্যই পোকামাকড় এর উপদ্রব কম হয়। প্রাচীন আর্যঋষিদের ভাবনা নির্দেশনা হলেও আধুনিক বিজ্ঞানে প্রমানিত সত্য হিসাবে প্রকাশ পাচ্ছে। গাভী বিষ্ণুর বাহন, ষাড় শিবের বাহন এবং গোজাতি হত্যা মহাপাপ। পৃথিবীতে সম্ভবত গো-জাতিই একমাত্র প্রাণী যা খায় ঘাষ, দেয় দুধ, মল ও মুত্র ত্যাগের মাধ্যমে প্রকৃতিতে তথা আমাদেরকে দেয় জৈব সার ও জীবানু নাশক উপাদান। সম্ভবত একসঙ্গে এধরনের একাধিক উপযোগীতা পৃথিবীর অন্য কোন পশুকুলের মধ্যে দেখা যায় না। কৃষি সভ্যতার শুরু থেকে গরুই একমাত্র প্রানী যা মানুষকে কোটি কোটি বছর অবধি চাষের ভূমি কর্ষন করে সহজে অধিক ফসল ফলাতে সাহায্য করেছে।এত উপকারী একটি প্রাণী কে মা বলে সম্মান জানানো কেন যায়না এটাই বোধগম্য নয়।
গরু হিন্দুদের মা,গরুর পেট থেকে তো গরুর বাচ্চা হয় মানুষের বাচ্চা তো হয়না তাহলে গরুকি করে মানুষের মা হয়?
উঃ গরু হিন্দুদের মা এটা কোন গ্রন্থে বলা আছে কী? অতি সুপ্রাচীনকাল হতে ভারতবর্ষের অনেক রাজা-মহারাজার গোপালন করতেন। মহাভারতে বর্ণিত, বিরাট রাজার ষাট হাজার গাভী ছিল। কে কত বেশী ধনশালী ও সমৃদ্ধশালী তা ঐ রাজ্যের গোশালা ও গরুর সংখ্যার উপর নির্ভর করতো। আইন-ই-আকবরী পাঠে জানা যায়, মুঘল সম্রাট আকবরেরও শতশত গাভী ও বলদ ছিল। তিনি মুসলমান হয়েও ভারতবর্ষে গোহত্যা নিষিদ্ধ করেছিলেন।
এখন আসি গরুর মাংস খাই না কিন্তূ চামড়ার জুতা কেন পড়ি?
উঃ চামড়ার তৈরী জুতা পরা আর জবাই করে মাংস খাওয়া দুই ভিন্ন জিনিস। একটা গরুর আয়ুষ্কাল ২০/২২ বছর, এর ভিতরে সে মারা যাবে, আর মরা গরুর চামড়া তুলে নিলে সে নিশ্চই আবার মারা যাবে না এবং কষ্টও পাবে না, সুতরাং চামড়ার তৈরী জিনিস পরা আর এর মাংস খাওয়া কখনো এক হতে পারে না, এবং চামড়ার তৈরী জুতা পরা ও দোষের কিছু না ।
আমরা কুমিরের মাংস কেউ খাই না কিন্তূ এর চামড়ার তৈরী জিনিস ব্যবহার করি যা খুবই বেয়বহুল ।
গরুর চামড়া অপবিত্র । অথচ গোচর্মের তৈরি মৃদঙ্গ বৈষ্ণবরা ব্যবহার করেন কেন ?
উত্তর: বহু জিনিস অপবিত্র হলেও বেদ নির্ধারিত বিশেষ বিশেষ দ্রব্য পবিত্র বলেই গৃহীত হয়। যেমন, চামড়া অপবিত্র, কিন্তু হরিণের চর্মের আসন পবিত্র । অস্থি অপবিত্র, কিন্তু শঙ্খ পবিত্র। দাঁত অপবিত্র, কিন্তু হাতির দাঁত পবিত্র। মরা পাখির পালক অপবিত্র, কিন্তু ময়ূরের পাখা শুদ্ধ পবিত্র।বৃদ্ধ বা অসুস্থ হয়ে কোন গরু মারা গেলে বা কোন দূর্ঘটনায় নিহত গরুর চামড়া হাড়ের ব্যবহার বৈদিক যুগ থেকেই প্রচলিত । বৈদিক ঋষিরা পূর্ব থেকেই মৃত গরুর চামড়া নানা কাজ ব্যবহার করতো । তাই মৃত গরুর চামড়া দিয়ে বানানো জুতা শাস্ত্রবিরোধী নয়।
No comments:
Post a Comment