হিন্দুধর্মের আলো,এই ব্লগ সাইটটি হিন্দু (সনাতন) ধর্মের একটি পুর্নাঙ্গ ওয়েব পোর্টাল গড়ার প্রচেষ্টায় কাজ করছে। এই সাইটের মূল উদ্দেশ্য হলো হিন্দুধর্মের প্রচার। এই ব্লগ সাইটটি হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্র সম্পর্কিত বিভিন্ন মন্ত্র, বিভিন্ন পূজা-অর্চনা, আরতি, ধ্যান,দশবিধ সংস্কার, তিলক,আরাধনা,বিভিন্ন ব্রত পালনসহ বিস্তারিত জানতে পারবেন।এই সাইটি বড় তথ্যের ভান্ডার করতে কিছু পোস্ট ফেসবুক ও ব্লগ থেকে সংগ্রহ করা হয়ে। এই ব্লগ পোস্ট সমূহ নিয়মিত শেয়ার করে হিন্দুধর্ম প্রচার বৃদ্ধিতে সাহায্য করবেন।

  • This is default featured slide 1 title

    Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

  • This is default featured slide 2 title

    Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

  • This is default featured slide 3 title

    Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

  • This is default featured slide 4 title

    Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

  • This is default featured slide 5 title

    Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

বর্ণপ্রথার প্রভাবে বিবাহ থেকে শুরু করে হিন্দুধর্মের চরম অবনতি

বর্ণপ্রথার প্রভাবে  বিবাহ থেকে শুরু করে হিন্দুধর্মের চরম অবনতি 




হিন্দু সমাজে চারটি বর্ণ প্রচলিত আছে। যেমন-১) ব্রাহ্মণ, ২) ক্ষত্রিয়, ৩) বৈশ্য ও ৪) শূদ্র।

আমরা মনে করি যে, একজন ব্রাহ্মণের পুত্রই ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়ের পুত্রই ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের পুত্রই বৈশ্য, শূদ্রের পুত্রই শূদ্র। আসলে ঘটনাটি সঠিক নয়।


বিবাহ ক্ষেত্রে বৈষম্যঃ
সনাতন ধর্মালম্বীদের মাঝে এখনও বর্ণ প্রথা প্রবল।এদেশে এখনও ব্রাহ্মণের ছেলের বিয়ের জন্য ব্রাহ্মণ মেয়ে, দত্ত ছেলের জন্য দত্ত মেয়ে, কর্মকারের ছেলের বিয়ের জন্য কর্মকারের মেয়ে লাগবেই। কারণ অন্য জাতের মেয়ে হলে নাকি আবার জাতকূল ধুয়ে এক হয়ে যায়।এমনই অনেক হিন্দু পরিবার আছে,যেখানে অভিভাবকরা তাদের ছেলেদের/মেয়েদের বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেলেও বিয়ে দিতে পারছে না শুধুমাত্র একই বর্ণের সুযোগ্য ছেলে/মেয়ে পাওয়া যাচ্ছে না বলে। দুঃখের কথা কি বলব, অনেকে বিয়ে করতে পারছেনা সুযোগ্য ভালো মেয়ে পাওয়া সত্যেও।তার কারন হচ্ছে জাতের সাথে জাতের মিল হচ্ছে না।তাহলে আপনারাই বুঝোন এই জাত প্রথাটা কতটা ভাইরাস হিসাবে এখনো আমাদের সমাজে যুগের পর যুগ টিকে আছে।বর্ণ প্রথার প্রভাব সনাতন ধর্মালম্বীদের মাঝে কেমন তার সম্পর্কে আশা করি কিছু হলেও ধারনা পেলেন।


বর্ণঃ

প্রকৃত যে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র বোঝাতে তা হলো ‘বর্ণ’ (‘জাতি’ নয়)।
‘বর্ণ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে এই চারকে বোঝাতেই নয়, বরং দস্যু ও আর্যদেরকেও।

‘বর্ণ’ অর্থ হচ্ছে তাহাই যাহা গ্রহণ করা হয় পছন্দের দ্বারা। তাই, যেখানে ‘জাতি’ ঈশ্বর দ্বারা প্রদত্ত, ‘বর্ণ’ হচ্ছে আমাদের নিজস্ব পছন্দগত।

যারা আর্য হতে পছন্দ করে তাদের বলা হয় ‘আর্য বর্ণ’। তেমনি যারা দস্যু হতে পছন্দ করে, তারা হয় ‘দস্যু বর্ণ’। একইভাবে হয় ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র।

এই সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই জানতে হবে ব্রাহ্মণ কি, ক্ষত্রিয় কি, বৈশ্য কি এবং শূদ্র কি ?
ব্রাহ্মণ :- ব্রহ্মজ্ঞানে বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ব্যক্তি, যিনি সত্ত্বঃ গুণ দ্বারা প্রভাবিত।
ক্ষত্রিয় :- শাসক বা যোদ্ধা সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তি, যিনি রজঃ গুণ দ্বারা প্রভাবিত।
বৈশ্য :- ব্যবসায় সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তি, যিনি রজঃ ও তমঃ গুণ দ্বারা প্রভাবিত ।
শূদ্র :- শ্রমজীবী সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তি হচ্ছেন শূদ্র, যিনি তমঃ গুণ দ্বারা প্রভাবিত ।

অর্থাৎ ব্রাহ্মণরা তপস্যা করেন, ক্ষত্রিয়রা শাসন ও যুদ্ধ করেন, বৈশ্যরা ব্যবসায় করেন এবং শূদ্ররা শ্রমবিক্রি করে জীবনযাপন করে । আমরা এর মাধ্যমে বুঝতে পারছি যে, যে যেরকম কর্ম করবে, সে সেই উল্লিখিত বর্ণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। অর্থাৎ একজন শূদ্রের পূত্র যদি ব্রহ্মজ্ঞানে দীক্ষিত হয় তাহলে সে ব্রাহ্মণ হবে এবং ঠিক এভাবেই একজন ব্রাহ্মণের পুত্র যদি শ্রমবিক্রি করে জীবনযাপন করে তাহলে সে শূদ্র হবে। এই যে বর্ণ বিভাজন-এটা কিন্তু জন্মভেদে নয় কর্মভেদে।


জাতি জন্ম নয় কর্মের উপর নির্ভর করে। যদি চিকিৎসকের ছেলে মেয়ে চিকিৎসার পড়াশোনা না করে তবে সে ডক্টর হবে না। সেইভাবে মা বাবার সন্তান বলে তার জাতি মা বাবার মতো হবে না। জাতি আপনার কর্মের ভিত্তিতে হয়। রামায়ণের রচয়িতা একজন ব্রাহ্মণ ছিলেন কিন্তু তার পিতা শুদ্র ছিলেন। এগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, জাতি জন্মের ভিত্তিতে নয় কর্মের ভিত্তিতে হয়।


বেদে স্পষ্ট বলা আছে, যার যার কার্যকারণে তার বর্ণ নির্ধারণ করবে। এবং সকলেই সকলের উপর নির্ভরশীল। আসুন এবার দেখি সনাতন ধর্মে বর্ণ প্রথা সম্পর্কে ‘বেদ’ এ কি বলা আছে। ঋগবেদ
১.১১৩.৬

“একজন জ্ঞানের উচ্চ পথে(ব্রাহ্মন) ,অপরজন বীরত্বের গৌরবে(ক্ষত্রিয়) , একজন তার নির্দিষ্ট পেশাভিত্তিক(বৈশ্য), আরেকজন সেবার পরিশ্রমে(শূদ্র)। সকলেই তার ইচ্ছামাফিক পেশায়,সকলের জন্যই ঈশ্বর জাগ্রত। ঋগবেদ ৯.১১২.১

বৈদিক  ইতিহাসে  বর্ণ পরিবর্তনের অনেক  উদাহরণ    রয়েছে। যেমন-

(ক)
ঋষি ঐতরেয়া ছিলেন দাস বা অপরাধীর পুত্র কিন্তু তিনি পরিণত হন শীর্ষ ব্রাহ্মণদের মধ্যে একজন এবং লেখেন ঐতরেয়া ব্রহ্ম এবং ঐতরেয়াপোনিষদ। ঐতরেয়া ব্রহ্মকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয় ঋগবেদ বোঝার জন্য।

(খ)
ঋষি ঐলুশ জন্মেছিলেন দাসীর ঘরে যিনি ছিলেন জুয়াখোর এবং নিচু চরিত্রের লোক। কিন্তু এই ঋষি ঋগবেদের উপর গবেষণা করেন এবং কিছু বিষয় আবিষ্কার করেন। তিনি শুধুমাত্র ঋষিদের দ্বারা আমন্ত্রিতই হতেন না এমনকি আচার্য্য হিসেবেও অধিষ্ঠিত হন। (ঐতরেয়া ব্রহ্ম ২.১৯)

(গ)
সত্যকাম জাবাল ছিলেন এক পতিতার পুত্র যিনি পরে একজন ব্রাহ্মণ হন।

(ঘ)
প্রীষধ ছিলেন রাজা দক্ষের পুত্র যিনি পরে শূদ্র হন। পরবর্তীতে তিনি তপস্যা দ্বারা মোক্ষলাভ করেন প্রায়ঃশ্চিত্তের পরে। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.১.১৪)
যদি তপস্যা শূদ্রদের জন্য নিষিদ্ধ হতো যেমনভাবে উত্তর রামায়ণের নকল গল্প বলে, তাহলে প্রীষধ কিভাবে তা করল?

(ঙ)
নবগ, রাজা নেদিস্থের পুত্র পরিণত হন বৈশ্যে। তার অনেক পুত্র হয়ে যান ক্ষত্রিয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.১.১৩

(ঙ)
নবগ, রাজা নেদিস্থের পুত্র পরিণত হন বৈশ্যে। তার অনেক পুত্র হয়ে যান ক্ষত্রিয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.১.১৩)

(চ)
ধৃষ্ট ছিলেন নবগের (বৈশ্য) পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন এবং তার পুত্র হন ক্ষত্রিয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.২.২)

(ছ)
তার পরবর্তী প্রজন্মে কেউ কেউ আবার ব্রাহ্মণ হন। (বিষ্ণু পুরাণ ৯.২.২৩)

(জ)
ভগবদ অনুসারে অগ্নিবেশ্য ব্রাহ্মণ হন যদিও তিনি জন্ম নেন এক রাজার ঘরে।

(ঝ)
রাথোটর জন্ম নেন ক্ষত্রিয় পরিবারে এবং পরে ব্রাহ্মণ হন বিষ্ণু পুরাণ ও ভগবদ অনুযায়ী।

(ঞ)
হরিৎ ব্রাহ্মণ হন ক্ষত্রিয়ের ঘরে জন্ম নেয়া সত্ত্বেও। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.৩.৫)

(ট)
শৌনক ব্রাহ্মণ হন যদিও ক্ষত্রিয় পরিবারে জন্ম হয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.৮.১)
এমনকি বায়ু পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ ও হরিবংশ পুরাণ অনুযায়ী শৌনক ঋষির পুত্রেরা সকল বর্ণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
একই ধরনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় গ্রীতসমদ, বিতব্য ও বৃৎসমতির মধ্যে।

(ঠ)
মাতঙ্গ ছিলেন চন্ডালের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন।

(ড)
রাবণ জন্মেছিলেন ঋষি পুলৎস্যের ঘরে কিন্তু পরে রাক্ষস হন।

(ঢ)
প্রবৃদ্ধ ছিলেন রাজা রঘুর পুত্র কিন্তু পরে রাক্ষস হন।

(ণ)
ত্রিশঙ্কু ছিলেন একজন রাজা যিনি পরে চন্ডাল হন।

(ত)
বিশ্বামিত্রের পুত্রেরা শূদ্র হন। বিশ্বামিত্র নিজে ছিলেন ক্ষত্রিয় যিনি পরে ব্রাহ্মণ হন।

(থ)
বিদুর ছিলেন এক চাকরের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন এবং হস্তিনাপুর রাজ্যের মন্ত্রী হন।

বেদের কোথাও বলা নেই এক বর্ণের মানুষ আরেক বর্ণের পার্থক্য।কিন্তু উচ্চ বর্ণের মানুষরা নীচু বর্ণের মানুষদের মানুষ মনে করে কিনা সন্দেহ।
আশা করি বর্ণ প্রথা সম্পর্কে সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীদের আদি অন্ত পরিষ্কার করতে পেরেছি।আর এখনও যদি কেও ভাবেন সনাতন ধর্মে ব্রাহ্মনরাই উচুস্তরের তাহলে আপনাকে আমার আর বুঝানোর ক্ষমতা নাই।কারন ব্রাহ্মন সেই হওয়ার যোগ্য রাখে যে পাণ্ডিত দিক দিয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।হোক সে বৈশ্য,ক্ষত্রিয় অথবা শূদ্র।বর্তমান সমাজে যেহেতু শিক্ষা ও পেশা সবার জন্য উন্মুক্ত তাই এ প্রথা আজ অপপ্রথায় পরিণত হয়েছে।বরং সমাজে বর্ণ ভেদের কারনে বিভাজন দৃশ্যমান, অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দারিয়েছে।

আসুন  এবার দেখে আমাদের দেশে সর্বোচ্চ আইন মানে সংবিধান মানুষের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে কি বলে, ৩য় অধ্যায় ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী এবং রাষ্ট্র কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করিবে না।
এখন  মৌলিক অধিকারের এই আইনকে যদি ব্যাখ্যা করা হয় তবে রাষ্ট্র যেমন প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার সংরক্ষণ করবে কেবল ধর্ম,গোষ্ঠী,বর্ণ,নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করবে না। এই গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব শুধু রাষ্ট্রের নয় রাষ্ট্র ছাড়া  ও রাষ্ট্রে অবস্থান রত সকল Organization এবং রাষ্ট্রের বাহিরে অবস্থিত দূতাবাসগুলোদেও বর্তায়। রাষ্ট্রের অবস্থান রত সকল Organization এর মধ্যে হিন্দু সমাজের পরিচালকা শ্রেণীকেও বুঝায় যারা হিন্দুসমাজের কর্তা যিনি রাষ্ট্রেও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ধর্ম,গোষ্ঠী,বর্ণ,নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো বৈষম্য প্রদর্শন করিবে না।   কিন্ত হিন্দুধর্মের মধ্যে অদৃশ্য বর্ণ বা বর্ণবৈষম্যই হিন্দুদের Discrimination এর বড় কারণ ।
প্রত্যেক হিন্দু ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সচেতনতামূলক শিক্ষা ও বাস্তবমূখি শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন।
বর্তমানে দৈনিক জীবনে যে সমস্যার মধ্য দিয়ে হিন্দু সমাজ যাচ্ছে এভাবেই যদি যেতে থাকে তবে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে প্রথিবীর প্রাচীনতম সনাতন ধর্ম ।


তবে আশার বিষয় হল এখন হিন্দু সমাজে অনেকটাই জেগে উঠেছে যার জন্য বিভিন্ন সময় এর চিত্রের মাধ্যমে প্রদর্শনী হয়, পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠান সংঘবদ্ধতার জন্য কাজ করছে।
এখন সমাজের প্রত্যেকটিই হিন্দুধর্মের যে কোনো ধর্মীয়গ্রন্থ পড়ার বা ধর্মীয়জ্ঞানের অধিকার রাখে।
আশা করি এর দ্বারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে হিন্দু সমাজ অচিরেই সংঘবদ্ধ হবে। প্রতিটি মানুষ ভগবানের কাছে সমান।   

 হিন্দুধর্মের সচেতনতা ও  প্রচার বৃদ্ধিতে এই পোস্টটি শেয়ার করবেন।
                                            হরেকৃষ্ণ 



সংগ্রহকৃত
Share:

হিন্দুধর্মের বর্ণপ্রথা সম্পর্কে আসল বিষয় জানতে হবে?

হিন্দু সমাজে চারটি বর্ণ প্রচলিত আছে। যেমন- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়,বৈশ্য ও শূদ্র। 



আমরা মনে করি যে, একজন ব্রাহ্মণের পুত্রই ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়ের পুত্রই ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের পুত্রই বৈশ্য, শূদ্রের পুত্রই শূদ্র। আসলে ঘটনাটি সঠিক নয়।

এই সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই জানতে হবে ব্রাহ্মণ কি, ক্ষত্রিয় কি, বৈশ্য কি এবং শূদ্র কি ?
ব্রাহ্মণ :- ব্রহ্মজ্ঞানে বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ব্যক্তি, যিনি সত্ত্বঃ গুণ দ্বারা প্রভাবিত।
ক্ষত্রিয় :- শাসক বা যোদ্ধা সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তি, যিনি রজঃ গুণ দ্বারা প্রভাবিত।
বৈশ্য :- ব্যবসায় সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তি, যিনি রজঃ ও তমঃ গুণ দ্বারা প্রভাবিত ।
শূদ্র :- শ্রমজীবী সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তি হচ্ছেন শূদ্র, যিনি তমঃ গুণ দ্বারা প্রভাবিত ।

অর্থাৎ ব্রাহ্মণরা তপস্যা করেন, ক্ষত্রিয়রা শাসন ও যুদ্ধ করেন, বৈশ্যরা ব্যবসায় করেন এবং শূদ্ররা শ্রমবিক্রি করে জীবনযাপন করে । আমরা এর মাধ্যমে বুঝতে পারছি যে, যে যেরকম কর্ম করবে, সে সেই উল্লিখিত বর্ণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। অর্থাৎ একজন শূদ্রের পূত্র যদি ব্রহ্মজ্ঞানে দীক্ষিত হয় তাহলে সে ব্রাহ্মণ হবে এবং ঠিক এভাবেই একজন ব্রাহ্মণের পুত্র যদি শ্রমবিক্রি করে জীবনযাপন করে তাহলে সে শূদ্র হবে। এই যে বর্ণ বিভাজন-এটা কিন্তু জন্মভেদে নয় কর্মভেদে।


জাতিঃ

‘জাতি’র অর্থ হচ্ছে এক শ্রেণীভুক্তকরণ যার উৎস হচ্ছে জন্মে। ন্যায় সূত্র বলেছে “সমানপ্রসাভাত্মিকা জাতিহ্‌” অথবা তারা যাদের একইপ্রকার জন্মসূত্র যা এদেরকে একটি জাতিতে সমষ্টিবদ্ধ করে।
একটি প্রাথমিক আরো বড় শ্রেণীভুক্তকরণ ঋষিদের দ্বারা করা হয়েছে চারভাবে: উদ্ভিজ (অর্থাৎ গাছপালা),  আন্ডাজ (অর্থাৎ ডিম থেকে যার উৎপত্তি যেমন পাখি এবং সরীসৃপ), পিন্ডজ (স্তন্যপায়ী), উষ্মজ (তাপমাত্রা বা পরিবেষ্টনকারী আবহাওয়ার জন্য যার জন্ম যেমন ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া ইত্যাদি)।
তেমনিভাবে নানাপ্রকার পশুসমূহ যেমন হাতি, সিংহ, খরগোশ ইত্যাদি তৈরি করে এক ভিন্ন ‘জাতি’। একইভাবে সমস্ত মানবকুল তৈরি করে একটি ‘জাতি’।
একটি নির্দিষ্ট জাতির থাকবে একই ধরনের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য যারা সেই জাতি থেকে আরেক জাতিতে পরিবর্তিত হতে পারবে না এবং ভিন্ন জাতির বাচ্চা প্রসব করতে পারবে না। অর্থাৎ, জাতি হচ্ছে ঈশ্বরের সৃষ্টি।
ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্রেরা কোনোভাবেই ভিন্ন জাতি নয় কারণ তাদের মধ্যে জন্ম সূত্রগত বা বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগত কোনো পার্থক্য নেই যা তাদেরকে ভিন্ন করবে।
পরবর্তীতে ‘জাতি’ শব্দটি ব্যবহৃত হতে শুরু করে যেকোনো প্রকার শ্রেণীভেদকরণের জন্য। তাই সাধারণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা ভিন্ন ভিন্ন সমাজকেও ভিন্ন ভিন্ন ‘জাতি’ হিসেবে আখ্যা দেই। কিন্তু এ শুধু ব্যবহারের সুবিধার জন্য। আসলে আমরা মানবকুল এক জাতিরই অংশ।


বর্ণঃ

প্রকৃত যে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র বোঝাতে তা হলো ‘বর্ণ’ (‘জাতি’ নয়)।
‘বর্ণ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে এই চারকে বোঝাতেই নয়, বরং দস্যু ও আর্যদেরকেও।

‘বর্ণ’ অর্থ হচ্ছে তাহাই যাহা গ্রহণ করা হয় পছন্দের দ্বারা। তাই, যেখানে ‘জাতি’ ঈশ্বর দ্বারা প্রদত্ত, ‘বর্ণ’ হচ্ছে আমাদের নিজস্ব পছন্দগত।

যারা আর্য হতে পছন্দ করে তাদের বলা হয় ‘আর্য বর্ণ’। তেমনি যারা দস্যু হতে পছন্দ করে, তারা হয় ‘দস্যু বর্ণ’। একইভাবে হয় ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র।

এই কারণেই বৈদিক ধর্মকে বলা হয় ‘বর্ণাশ্রম ধর্ম’। বর্ণ শব্দটি ইঙ্গিত করে যে এটির ভিত্তি হচ্ছে নিজ পছন্দকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া ও যোগ্যতা অনুসারে পরিচালিত ব্যবস্থাকে অনুমোদন দেয়া।



ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র এসব প্রতিটি বর্ণের কিছু গুণ আছে।

ব্রাহ্মণ কে ?
'যে ঈশ্বরের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত,অহিংস,সৎ,নিষ্ঠাবান,সুশৃঙ্খল, বেদ প্রচারকারী,বেদ জ্ঞানী সেই ব্রাক্ষ্মণ। ঋগ্বেদ, ৭/১০৩/৮
'ব্রাক্ষ্মনরা নিজো স্বার্থত্যগ করে কাজ করবেন, বেদ পড়বেন, এবং তা অপরকে শেখাবেন'। মনুসংহিতা, ১/৮৮

১) মন নিগ্রহ করা,

২) ইন্দ্রিয়কে বশে রাখা,
৩) ধর্মপালনের জন্য কষ্ট স্বীকার করা,
৪) বাহ্যান্তর শুচি রাখা,
৫) অপরের অপরাধ ক্ষমা করা,
৬) কায়-মনো-বাক্যে সরল থাকা,
৭) বেদ-শাস্ত্রাদিতে জ্ঞান সম্পাদন করা,
৮) যজ্ঞবিধি অনুভব করা,
৯) পরমাত্মা, বেদ ইত্যাদিতে বিশ্বাস রাখা,এই সবই হর ব্রাহ্মণের স্বভাবজাত কর্ম বা লক্ষণ।। গীতা, ১৮/৪২

অর্থাৎ এই সব গুণ যার মধ্যে থাকবে, সে নিজেকে ব্রাহ্মণ বলে দাবি করতে পারবেন। হোক সে ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র তবুও সে ব্রাহ্মণ হতে পারবে। জন্মগত ভাবে কেউ ব্রাহ্মণ নয়,কর্মের মাধ্যমে হতে হয়।


ক্ষত্রিয় কে?

'যে দৃঢ়ভাবে আচার পালনকারী, সৎ কর্ম দ্বারা শুদ্ধধ, রাজনৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন, অহিংস, ঈশ্বর সাধক, সত্যের ধারক ন্যায়পরায়ণ ,বিদ্বেষমুক্ত ধর্মযোদ্ধা,অসৎ এর বিনাশকারী সে ক্ষত্রিয়। (ঋগ্বেদ, ১০/৬৬/৮)
'ক্ষত্রিয়রা বেদ পড়বে, লোকরক্ষা ও রাজ্য পরিচালনায় নিযুক্ত থাকবে।" (মনুসংহিতা, ১/৮৯)
১) শৌর্য,
২) তেজ বা বীর্য,
৩) ধৈর্য,
৪) প্রজা প্রতিপালনের দক্ষতা,
৫) যুদ্ধে পশ্চাদপসরণ না করা,
৬) মুক্ত হস্তে দান করা,
৭) শাসন করার ক্ষমতা,এগুলি হল ক্ষত্রিয়ের স্বাভাবিক কর্ম। গীতা ১৮/৪৩

অর্থাৎ এই সব গুণ যার মধ্যে থাকবে, সে নিজেকে ক্ষত্রিয় বলে দাবি করতে পারবেন। হোক সে ব্রাহ্মণ, বৈশ্য, শূদ্র তবুও সে ক্ষত্রিয় হতে পারবে। জন্মগত ভাবে কেউ ক্ষত্রিয় নয়,কর্মের মাধ্যমে হতে হয়।


বৈশ্য কে.?...

'যে দক্ষ ব্যবসায়ী,দানশীল চাকুরীরত এবং চাকুরী প্রদানকারী সেই বৈশ্য। অথর্ববেদ, ৩/১৫/১
'বৈশ্যরা বেদ পড়বে,ব্যবসা ও কৃষিকর্মে নিজেদের নিযুক্ত থাকবে।মনুসংহিতা, ১/৯০
১) চাষ করা,
২) গো-রক্ষা করা,
৩) ব্যবসা-বাণিজ্য ও সত্য ব্যবহার করা,এগুলি হলো বৈশ্যদের স্বাভাবিক কর্ম। গীতা ১৮/৪৪

অর্থাৎ এই সব গুণ যার মধ্যে থাকবে, সে নিজেকে বৈশ্য বলে দাবি করতে পারবেন। হোক সে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, শূদ্র তবুও সে বৈশ্য হতে পারবে। জন্মগত ভাবে কেউ বৈশ্য নয়,কর্মের মাধ্যমে হতে হয়।


শূদ্র কে.?

যে অদম্য,পরিশ্রমী,অক্লান্ত জরা যাকে সহজে গ্রাস করতে পারেনা, লোভমুক্ত কষ্টসহিষ্ণু সেই শূদ্র।
ঋগ্বেদ, ১০/৯৪/১১
'শুদ্ররা বেদ পড়বে, এবং সেবা মুলক কর্মকান্ডে নিযুক্ত থাকবে।মনুসংহিতা, ১/৯১


অর্থাৎ যিনি সেবা মুলক কর্মকান্ডে নিযুক্ত থাকবে, তিনি শূদ্র বর্ণে অন্তর্ভুক্ত হবেন। হোক সে ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয় বৈশ্য,তবুও সে শূদ্র হয়ে যাবেন। জন্মগত ভাবে যিনি শূদ্র, তিনি কর্মের দ্বারা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, হতে পারবেন। 




 ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলেছেন :-
চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ তস্য কর্তারমপিমাং বিদ্ব্যকর্তারসব্যয়ম (৪/১৩) অর্থাৎ,
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন আমি চার বর্ণের রচনা করেছি। কিন্তু আমি মানুষকে চারটি শ্রেণিতে বিভাগ করিনি। গুণের আধারে কর্মকে চারভাগে বিভক্ত করেছি। গুণ এখানে মানদন্ড। কর্ম একটাই-নিয়ত কর্ম, আরাধনা। অবস্থাভেদে এই কর্মকেই উঁচুনিচু শ্রেণিতে বিভাগ করা হয়েছে। সুতরাং ব্রাহ্মণের সন্তান হলেই যে ব্রাহ্মণ হবে এমনটি নয়। কোন শূদ্রের সন্তানও ব্রাহ্মণ হতে পারে। আবার শূদ্রের সন্তান যে শূদ্র হবে এমনটি নয়। কোন ব্রাহ্মণের সন্তান যদি শ্রমবিক্রি করে জীবনযাপন করে তাহলে সে শূদ্র বল।


বৈদিক ইতিহাসে বর্ণ পরিবর্তনের  অনেক উদাহরণ রয়েছে –

(ক)
ঋষি ঐতরেয়া ছিলেন দাস বা অপরাধীর পুত্র কিন্তু তিনি পরিণত হন শীর্ষ ব্রাহ্মণদের মধ্যে একজন এবং লেখেন ঐতরেয়া ব্রহ্ম এবং ঐতরেয়াপোনিষদ। ঐতরেয়া ব্রহ্মকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয় ঋগবেদ বোঝার জন্য।

(খ)
ঋষি ঐলুশ জন্মেছিলেন দাসীর ঘরে যিনি ছিলেন জুয়াখোর এবং নিচু চরিত্রের লোক। কিন্তু এই ঋষি ঋগবেদের উপর গবেষণা করেন এবং কিছু বিষয় আবিষ্কার করেন। তিনি শুধুমাত্র ঋষিদের দ্বারা আমন্ত্রিতই হতেন না এমনকি আচার্য্য হিসেবেও অধিষ্ঠিত হন। (ঐতরেয়া ব্রহ্ম ২.১৯)

(গ)
সত্যকাম জাবাল ছিলেন এক পতিতার পুত্র যিনি পরে একজন ব্রাহ্মণ হন।

(ঘ)
প্রীষধ ছিলেন রাজা দক্ষের পুত্র যিনি পরে শূদ্র হন। পরবর্তীতে তিনি তপস্যা দ্বারা মোক্ষলাভ করেন প্রায়ঃশ্চিত্তের পরে। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.১.১৪)
যদি তপস্যা শূদ্রদের জন্য নিষিদ্ধ হতো যেমনভাবে উত্তর রামায়ণের নকল গল্প বলে, তাহলে প্রীষধ কিভাবে তা করল?

(ঙ)
নবগ, রাজা নেদিস্থের পুত্র পরিণত হন বৈশ্যে। তার অনেক পুত্র হয়ে যান ক্ষত্রিয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.১.১৩)

(চ)
ধৃষ্ট ছিলেন নবগের (বৈশ্য) পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন এবং তার পুত্র হন ক্ষত্রিয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.২.২)

(ছ)
তার পরবর্তী প্রজন্মে কেউ কেউ আবার ব্রাহ্মণ হন। (বিষ্ণু পুরাণ ৯.২.২৩)

(জ)
ভগবদ অনুসারে অগ্নিবেশ্য ব্রাহ্মণ হন যদিও তিনি জন্ম নেন এক রাজার ঘরে।

(ঝ)
রাথোটর জন্ম নেন ক্ষত্রিয় পরিবারে এবং পরে ব্রাহ্মণ হন বিষ্ণু পুরাণ ও ভগবদ অনুযায়ী।

(ঞ)
হরিৎ ব্রাহ্মণ হন ক্ষত্রিয়ের ঘরে জন্ম নেয়া সত্ত্বেও। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.৩.৫)

(ট)
শৌনক ব্রাহ্মণ হন যদিও ক্ষত্রিয় পরিবারে জন্ম হয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.৮.১)
এমনকি বায়ু পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ ও হরিবংশ পুরাণ অনুযায়ী শৌনক ঋষির পুত্রেরা সকল বর্ণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
একই ধরনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় গ্রীতসমদ, বিতব্য ও বৃৎসমতির মধ্যে।

(ঠ)
মাতঙ্গ ছিলেন চন্ডালের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন।

(ড)
রাবণ জন্মেছিলেন ঋষি পুলৎস্যের ঘরে কিন্তু পরে রাক্ষস হন।

(ঢ)
প্রবৃদ্ধ ছিলেন রাজা রঘুর পুত্র কিন্তু পরে রাক্ষস হন।

(ণ)
ত্রিশঙ্কু ছিলেন একজন রাজা যিনি পরে চন্ডাল হন।

(ত)
বিশ্বামিত্রের পুত্রেরা শূদ্র হন। বিশ্বামিত্র নিজে ছিলেন ক্ষত্রিয় যিনি পরে ব্রাহ্মণ হন।

(থ)
বিদুর ছিলেন এক চাকরের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন এবং হস্তিনাপুর রাজ্যের মন্ত্রী হন।

“শূদ্র” শব্দটি বেদে দেখা গেছে প্রায় ২০ বারের মতো। কোথাও এটি অবমাননাকরভাবে ব্যবহৃত হয়নি। কোথাও বলা হয়নি শূদ্রেরা হলো অস্পর্শযোগ্য, জন্মগতভাবে এই অবস্থাণে, বেদ শিক্ষা হতে অনুনোমোদিত, অন্যান্য বর্ণের তুলনায় নিম্ন অবস্থাণের, যজ্ঞে অনুনোমোদিত।

বেদে বলা হয়েছে শূদ্র বলতে বোঝায় কঠিন পরিশ্রমী ব্যক্তি। (তপসে শূদ্রম্‌ – যজুর্বেদ ৩০.৫)
একারণেই পুরুষ সুক্ত এদের বলে পুরো মানব সমাজের কাঠামো।


যেহেতু বেদ অনুযায়ী চার বর্ণসমূহ বলতে বোঝায় চার প্রকারের কর্মকান্ড যা পছন্দের উপর ভিত্তি করে, একই ব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে চার বর্ণের বৈশিষ্ট্য চার ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে। এইভাবে সকলেই চার বর্ণের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু সারল্যতার জন্য, আমরা বলি প্রধান পেশাকে বর্ণের পরিচয় হিসেবে। এবং এই কারণে সকল মানুষের উচিত পূর্ণভাবে চার বর্ণ হবার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা, যেমনভাবে বেদের জ্ঞান আমাদের বলে। এই হলো পুরুষ সুক্তের সারাংশ।

অবশেষে আমরা দেখলাম বৈদিক সমাজ সকল মানুষকে একই জাতি বা গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য করে, শ্রমের মর্যাদা বহাল রাখে, এবং সকল মানুষের জন্য সমান সুযোগ প্রদান করে যাতে তারা নিজ নিজ বর্ণ গ্রহণ করতে পারে।
বেদে কোনো প্রকার জন্মগত বৈষম্যের উল্লেখ নেই।
আমরা যেন সকলে একযুক্ত হয়ে একটি পরিবারের ন্যায় একতাবদ্ধ হতে পারি, প্রত্যাখান করতে পারি জন্মগত সকল বৈষম্যকে এবং একে অপরকে ভাই-বোন হিসেবে সদ্ব্যবহার করতে পারি।

আমরা যেন সকল পথভ্রষ্টকারীদের ভুল পথে এগুলো
ব্যাহত করতে পারি যারা বেদে বর্ণভেদ সম্পর্কে ভিত্তিহীন দাবী করে এবং দমন করি সকল দস্যু, অসুর, রাক্ষসদের।
আমরা যেন সকলে আসতে পারি বেদের আশ্রয়ে এবং একত্রে কাজ করে মানবতার বন্ধনকে আরো দৃঢ় করতে পারি এক পরিবার হিসেবে।সুতরাং বেদ অনুযায়ী কোনো বর্ণভেদ নেই।

যদিও আসলে জাতি জন্ম নয় কর্মের উপর নির্ভর করে। যদি চিকিৎসকের ছেলে মেয়ে চিকিৎসার পড়াশোনা না করে তবে সে ডক্টর হবে না। সেইভাবে মা বাবার সন্তান বলে তার জাতি মা বাবার মতো হবে না। জাতি আপনার কর্মের ভিত্তিতে হয়। রামায়ণের রচয়িতা একজন ব্রাহ্মণ ছিলেন কিন্তু তার পিতা শুদ্র ছিলেন। এগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, জাতি জন্মের ভিত্তিতে নয় কর্মের ভিত্তিতে হয়।

যেমন কোনো ব্যক্তি সেনাতে কাজ করলে তার জাতি ক্ষত্রিয় হয়ে যায়। যদি কেউ ধার্মিক কাজ করে তবে যে ব্রাহ্মণ হয়ে যাবে। যদি কেউ ব্যাবসার কাজ করে বৈশ্য হবে আর সেবার কাজ করলে শুদ্র হবে। পদবী শব্দের অর্থৎ পদ থেকে এসেছে। আপনার পদ অনুযায়ী পদবী হবে। নরেনের পিতা বোস, ঘোষ, ব্যানার্জী, মুখার্জী যাইহোক না কেন, নরেনের পদবী নির্ভর করা উচিত তার কর্মের উপর। বর্তমানে সেটাকে অন্য রূপ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলস্বরূপ হিন্দু জাতি দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়েছে।


হিন্দুধর্মের মধ্যে অদৃশ্য বর্ণ বা বর্ণবৈষম্যই হিন্দুদের Discrimination এর বড় কারণ ।প্রত্যেক হিন্দু ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সচেতনতামূলক শিক্ষা ও বাস্তবমূখি শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে দৈনিক জীবনে যে সমস্যার মধ্য দিয়ে হিন্দু সমাজ যাচ্ছে এভাবেই যদি যেতে থাকে তবে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে প্রথিবীর প্রাচীনতম সনাতন ধর্ম।

হিন্দুধর্মের সচেতনতা বৃদ্ধিতে এই পোস্টটি শেয়ার করবেন।

                                 হরে কৃষ্ণ                           



সংগ্রহকৃত



Share:

মূর্তি পূজা কেন করা হয়?

মূর্তি পূজা  কেন করা হয়?



















অনেকেই সনাতন ধর্মের মূর্তি পূজা নিয়ে প্রশ্ন করেন। আজ আপনাদের মূর্তি পূজো কি এবং কেন করা হয় তা সনাতন দর্শনের...আলোকে তুলে ধরব।
মূর্তি পূজোর স্বরূপ জানতে হলে প্রথমে আমাদেরকে জানতে হবে ঈশ্বর ও দেবতা বলতে সনাতন দর্শনে কি বলা হয়েছে।

ঈশ্বর ও দেবতাঃ
প্রথমেই বলে রাখা দরকার সনাতন দর্শনে বহুঈশ্বরবাদের স্থান নাই
বরং আমরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী। হিন্দু শাস্ত্র মতে, ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। সনাতন দর্শন বলে, ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ অর্থাৎ ঈশ্বর নিজে থেকে উৎপন্ন, তার কোন
স্রষ্টা নেই, তিনি নিজেই নিজের স্রষ্টা। আমাদের প্রাচীন ঋষিগন বলে গিয়েছেন
ঈশ্বরের কোন নির্দিষ্ট রূপনেই(নিরাকার ব্রহ্ম) "না তাস্তি প্রতিমা আস্তি" তার কোন প্রতিমা,ছবি,মূর্তি নেই। তাই তিনি অরূপ,তবে তিনি যে কোন
রূপধারন করতে পারেন কারণ তিনিই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের
সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
ঋকবেদে বলা আছে, ঈশ্বর ‘একমেবাদ্বিতীয়ম’- ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। ঈশ্বর বা ব্রহ্ম (ব্রহ্মা নন) সম্পর্কে আরও বলা হয়,
‘অবাংমনসগোচর’ অর্থাৎ ঈশ্বরকে কথা(বাক), মন বা চোখ
দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, তিনি বাহ্য জগতের অতীত।
ঈশ্বর সম্পর্কে ঋকবেদে বলা আছে- ‘একং সদ বিপ্রা বহুধা বদন্তি (ঋক-১/৬৪/৪৬)
অর্থাৎ সেই এক ঈশ্বরকে পণ্ডিতগণ বহুনামে বলে থাকেন।
‘একং সন্তং বহুধন কল্পায়ন্তি’ (ঋক-১/১১৪/৫) অর্থাৎ সেই এক ঈশ্বরকে বহুরূপে কল্পনা করা হয়েছে।
‘দেবানাং পূর্বে যুগে হসতঃ সদাজায়ত’ (ঋক-১০/৭২/৭) অর্থাৎ
দেবতারও পূর্বে সেই অব্যক্ত (ঈশ্বর) হতে ব্যক্ত জগত উৎপন্ন হয়েছে।
ঈশ্বর এক কিন্তু দেবদেবী অনেক।

তাহলে দেব দেবী কারা ? 
মনে রাখতে হবে দেব দেবীগণ ঈশ্বর নন। ঈশ্বরকে বলা হয় নির্গুণ অর্থাৎ জগতের সব গুনের(quality) আধার তিনি।
আবার ঈশ্বর সগুনও কারণ সর্ব শক্তিমান ঈশ্বর চাইলেই
যে কোন গুনের অধিকারী হতে পারেন এবং সেই গুনের প্রকাশ তিনি ঘটাতে পারেন ।
দেব দেবীগন ঈশ্বরের এই সগুনের প্রকাশ।অর্থাৎ ঈশ্বরের এক একটি গুনের সাকার প্রকাশই দেবতা। ঈশ্বর নিরাকার কিন্তু তিনি যে কোন রূপে সাকার হতে পারেন আমাদের সামনে, কারণ তিনি সর্ব ক্ষমতার অধিকারী।
যদি আমরা বিশ্বাস করি ঈশ্বর সর্বশক্তিমান তাহলে নিরাকার ঈশ্বরের সাকার গুনের প্রকাশ খুবই স্বাভাবিক।তাই ঈশ্বরের শক্তির স্বগুন রূপদুর্গা, কালী, পার্বতী;বিদ্যার স্বগুন রূপসরস্বতী; ঐশ্বর্যের সগুনরূপলক্ষ্মী, মৃত্যুর রূপযম। তেমনি ঈশ্বর যখন সৃষ্টি করেন তখন ব্রহ্মা ( ব্রহ্ম নয়), যখন পালন করেন তখন বিষ্ণু আর প্রলয়রূপে শিব।এজন্য বলা হয়ে থাকে ঈশ্বরই ব্রহ্মা,তিনিই বিষ্ণু, তিনিই শিব।
তাহলে আমরা এখন বুঝতে পারছি দেব দেবী অনেক হতে পারে কিন্তু ঈশ্বর এক
এবং দেবতাগণ এই পরম ব্রহ্মেরই বিভিন্ন রূপ। তাই হিন্দুরা বহু দেবোপাসক(বস্তুত
দেবোপাসনা ঈশ্বর উপাসনাই) হতে পারে তবে বহুঈশ্বরবাদী নন।
এতক্ষন আপনাদেরকে বললাম ঈশ্বর আর দেবতার পার্থক্য। এখন বলব
তাহলে আমরা কেন এ সকল দেব দেবীগণের মূর্তি পূজা করি।

মূর্তি পূজার রহস্যঃ
মানুষের মন স্বভাবতই চঞ্চল। পার্থিব জগতে আমাদের চঞ্চল মন নানা কামনা বাসনা দিয়ে আবদ্ধ। আমরা চাইলেই এই
কামনা বাসনা বা কোন কিছু পাবার আকাংক্ষা থেকে মুক্ত
হতে পারি না। (ধরুন একজনশিক্ষার্থী তাঁর শিক্ষা জীবনের বাসনা থাকে পরীক্ষায় প্রথম হওয়া। এ জন্য সে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা করে।)
তীব্র গতির এই মনকে সংযত করা, স্থির করার ব্যবস্থা করা হয় এই
সগুনঈশ্বরের বিভিন্ন রুপের মাধ্যমে।
মনে রাখতে হবে আমরা কখনই ঈশ্বরের বিশালতা বা অসীমতা কে আমদের
সসীম চিন্তা দিয়ে বুঝতে পারব না। বরং সর্বগুণময় ঈশ্বরের কয়েকটি বিশেষ গুনকেই
বুঝতে পারব। আর এ রকম এক একটি গুনকে বুঝতে বুঝতে হয়ত কোন
দিন সেই সর্ব গুণময়কে বুঝতে পারব।আর মূর্তি বা প্রতিমা হল এসকল গুনের
রূপকল্প বা প্রতীক।
এটা অনেকটা গনিতের সমস্যা সমাধানের জন্য ‘x’ ধরা।
আদতে x কিছুই নয় কিন্তু এক্স ধরেই হয়ত আমরা গনিতের সমস্যার উত্তর
পেয়ে যাই। অথবা ধরুন জ্যামিতির ক্ষেত্রে আমরা কোন কিছু বিন্দু
দিয়ে শুরু করি। কিন্তু বিন্দুর সংজ্ঞা হল যার দৈর্ঘ, প্রস্থ ও বেধ
নাই কিন্তু অবস্থিতি আছে –
যা আসলে কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। অথচ এই বিন্দুকে আশ্রয় করেই
আমরা প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরতা থেকে হিমালয়ের
উচ্চতা সব মাপতে পারি। আবার ধরুন ভূগোল পড়ার সময় একটি গ্লোব
রেখে কল্পনা করি এটা পৃথিবী আবার দেয়ালের ম্যাপ
টানিয়ে বলি এটা লন্ডন, এটা ঢাকা এটা জাপান। কিন্তু ঐ
গ্লোব বা ম্যাপ কি আসলে পৃথিবী? অথচ ওগুলো দেখেই আমরা পৃথিবী চিনছি।
তেমনি মূর্তির রূপ কল্পনা বা প্রতিমা স্বয়ং ঐসকল দেবতা নন তাঁদের প্রতীক, চিহ্ন
বা রূপকল্প। এগুলো রূপকল্প হতে পারে কিন্তু তা মনকে স্থির করতে সাহায্য করে এবং ঈশ্বরের বিভিন্ন গুনসম্পর্কে ধারনা দেয়, শেখায় ঈশ্বর সত্য। সব শেষে পরম ব্রহ্মের কাছে পৌছাতে সাহায্য করে। হিন্দু ধর্মে পূজা একটি বৈশিষ্ট্য।
কল্পনায় দাড়িয়ে সত্য উত্তরণই পূজার সার্থকতা। আমাদের ধর্মে ঈশ্বরের নিরাকার ও সাকারউভয় রূপের উপাসনার বিধান আছে।
নিরাকার ঈশ্বরের কোন প্রতিমা নাই, থাকা সম্ভবও না।
যারা ঈশ্বরের অব্যক্ত বা নিরাকার উপাসনা করেন তাঁদের
বলে নিরাকারবাদি। আর যারা ঈশ্বরের সাকার রূপের
উপাসনা করেন তাঁরা সাকারবাদি।
এজন্য গীতায় বলা আছে, যারা নিরাকার, নির্গুণ ব্রহ্মের
উপাসনা করেন তারাও ঈশ্বর প্রাপ্ত হন।তবে নির্গুণ উপাসকদের কষ্ট বেশি। কারণ নিরাকার ব্রহ্মে মনস্থির করা মানুষের পক্ষে খুবই ক্লেশকর।

তবে কি হিন্দুরা পৌত্তলিকঃ
অন্য ধর্মের লোকেরা সনাতন দর্শন সম্পর্কে না জেনেই মূর্তি পূজা দেখে মন্তব্য করে বসেন হিন্দুরা পৌত্তলিক। কিন্তু সঠিক দর্শন জানলে তাঁদের এ ভুল ধারনা ভাঙবে।আগেই বলেছি আমাদের দেবতা অনেক কিন্তু ঈশ্বর এক। ঈশ্বরের কোন প্রতিমা নেই। দেবতারা হলেন ঈশ্বরের এক একটি রূপের বা গুনের প্রকাশ।মূর্তি বা প্রতিমা হল সে সকল গুনের প্রতীক, চিহ্ন বা রূপকল্প। সব ধর্মেই এমন রূপকল্প, চিহ্ন বা প্রতীক আছে যা তাঁদের কাছে পবিত্র। যেমন ধরুন খৃস্টানদের গির্জায় মাতা মেরী বা ক্রুশবিদ্ধ যীশুর প্রতিমা থাকে যার সামনে তাঁরা নতজানু হয়ে প্রার্থনা করে। আবার ধরুন মুসলিমরা কাবাশরীফকে পবিত্র মনে করে চম্বন করে কিংবা কোন
কাগজে আরবিতে আল্লাহ লেখা থাকলে তাকে সম্মান দেয়, তাকে যেখানে সেখানে ফেলে দেয় না। তাহলে ঐ কাগজখানা কি আল্লাহ নিজে? না।
কিন্তু তারপরও তাকে সম্মান করে কারণ তা আল্লাহর নাম ওটা দেখে আল্লাহর কথা মনে আসে, তার প্রতি ভালবাসা প্রকাশ পায়।
কেউ কেউ শুন্যপানে চেয়ে প্রার্থনা করেন। তাহলে কি ঐ শুন্যপানে ঈশ্বরের বসতি।আসলে তা নয়।কিন্তু আমারা তো এভাবে প্রার্থনা করি। এভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়
জগতের সবাই পৌত্তলিক। এ প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের একটি ঘটনার
কথা বললে আপনারা বুঝতে পারবে। পরিব্রাজক স্বামী বিবেকানন্দ
তখন আলোয়ারের মহারাজের অতিথি। আলোয়ার রাজ কথাপ্রসঙ্গে স্বামীজিকে জানালেন যে মূর্তি পূজায় তিনি বিশ্বাস করেন না।
স্বামীজি একথা শুনে মহারাজার একটি চিত্র আনতে বললেন এবং রাজার দেওয়ানকে বললেন ওই ছবির উপর থুথু ফেলতে। সমস্ত রাজসভা নিঃশব্দে এই দৃশ্য
দেখতে লাগল। দেওয়ান স্বামিজির নির্দেশ পালনে অসমর্থ হলেন, তখন
স্বামী জি বললেন, 'এই ছবি তো একটি রং করা কাগজ মাত্র,
এই ছবি তো আর রাজা নয়, তাহলে এর উপর থুথু ফেলতে অসুবিধা কোথায় ? '
স্বামীজির বারংবার নির্দেশ সত্ত্বেও দেওয়ান যখন রাজার ছবিতে থুথু ফেলতে পারলেন না তখন স্বামীজি রাজাকে বুঝিয়ে বললেন, '' ফটোগ্রাফ তো একটি জড়বস্তু, একখণ্ড রং করা কাগজ মাত্র । তবু ওই ছবিটি আসল মানুষটিকে মনে করিয়ে দেয়। ছবিটির
দিকে দেখলে আমরা ভাবিনা যে নিছক কোনও রং করা কাগজ দেখছি।
ঠিক তেমনই আমরা যখন মাটির মূর্তি পূজা করি আমরা মনে করি স্বয়ং ভগবানকেই পূজা করছি। আমরা সে সময় কখনও মনে করিনা আমরা কোনও জড় মূর্তি বা খড় বা মাটির উপাসনা করছি। আমরা দেবতার মূর্তিকে শুধুমাত্র প্রতীক মনে করি এর বেশি কিছু নয়। এজন্য পূজার সময় পূজারী ব্রাহ্মণগন মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে প্রতিমায়
প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেন অর্থাৎ ধরে নেয়া হয় দেবতাগন ঐ প্রতিমায় ভাস্বর হয়ে উঠবেন।
আবার কাঠমাটির প্রতিমা যে ঐ সকল দেবতা নয় তার প্রমানমেলে পূজার পর প্রতিমাগুলোকে জলে বিসর্জন দিয়ে।
যদি প্রতিমাকেই ঐ সকল দেবতা মনে করা হত তাহলে নিশ্চয় কেউ তা জলে বিসর্জন দিত না। তাই হিন্দুর দেবমূর্তি পুতুল নয়। তা চিন্ময় ভগবানেরই প্রতীক।

সংগ্রহকৃত
Share:

হিন্দুধর্মের মতে ঈশ্বর কি এক ও দ্বিতীয়?

হিন্দুধর্মের মতে ঈশ্বর কি  এক ও দ্বিতীয়? 



















প্রথমেই বলে রাখা দরকার সনাতন দর্শনে বহু ঈশ্বরবাদের স্থান নাই। বরং আমরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী।


হিন্দু শাস্ত্র মতে, ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়।


সনাতন দর্শন বলে,ঈশ্বর স্বয়ম্ভূঅর্থাৎ ঈশ্বর নিজে থেকে উৎপন্ন, তার কোন স্রষ্টা নাই, তিনি নিজেই নিজের স্রষ্টা।


আমাদের প্রাচীন ঋষিগন বলে গিয়েছেন, ঈশ্বরের কোন নির্দিষ্ট রূপ নেই (নিরাকার ব্রহ্ম) তাই তিনি অরূপ, তবে তিনি যে কোন রূপ ধারন করতে পারেন। কারণ তিনিই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে সর্ব ক্ষমতার অধিকারী।


ঋকবেদে বলা আছে ঈশ্বর “একমেবাদ্বিতীয়ম” – ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়।ঈশ্বর বা ব্রহ্ম (নিরাকার ব্রহ্ম)।

 ঈশ্বর সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে তিনি “অবাংমনসগোচর” অর্থাৎ ঈশ্বরকে কথা(বাক), মন বা চোখ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, তিনি বাহ্য জগতের অতীত।


ঈশ্বর সম্পর্কে আরো বলা আছে-
১. ছান্দেগ্য উপনিষদের ৬ নম্বর অধ্যায়ের ২ নম্বর পরিচ্ছেদের ১ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে-
“একাম এবাদ্বিতীইয়ম”
অর্থ- “স্রষ্টা মাত্র একজনই দ্বিতীয় কেউ নেই।”


২. শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৬ নম্বর অধ্যায়ের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে

“না চস্য কসুজ জানিত না কধিপহ।”
অর্থ- “সর্ব শক্তিমান ঈশ্বরের কোন বাবা মা নেই, তাঁর কোন প্রভু নেই,তাঁর চেয়ে বড় কেউ নেই।"


৩. “একং সদ বিপ্রা বহুধা বদন্তি” (ঋকবেদ-১/৬৪/৪৬) 

অর্থাৎ “সেই এক ঈশ্বরকে পণ্ডিতগণ বহু নামে ডেকে থাকেন।”


৪. যজুবেদের ৩২ নম্বর অধ্যায়ের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে-

“ন তস্য প্রতিমা আস্তি।”
অর্থ- “সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কোন মূর্তি নেই।”


৫. যজুবেদের ৪০ নম্বর অধ্যায়ের ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে-

“সর্বশক্তিমান ঈশ্বর নিরাকার ও পবিত্র।”


৬. “একং সন্তং বহুধন কল্পায়ন্তি।” (ঋকবেদ-১/১১৪/৫) 

অর্থাৎ “সেই এক ঈশ্বরকে বহুরূপে কল্পনা করা হয়েছে।”


৭. “দেবানাং পূর্বে যুগে হসতঃ সদাজায়ত।” (ঋকবেদ-১০/৭২/৭) 

অর্থাৎ “দেবতারও পূর্বে সেই অব্যাক্ত(ঈশ্বর) হতে ব্যক্ত জগতে উৎপন্ন লাভ করেছে।”


৮. যজুবেদের ৪০.১ 

“এই সমস্ত বিশ্ব শুধু মাত্র একজন ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্টি ও পরিচালিত হচ্ছে।যিনি কখনই অন্যায় করে না অথবা অন্যায় ভাবে সম্পদ অর্জনের ইচ্ছা রাখে না।”


৯. ঋগবেদ ১০.৪৮.৫ 

“ঈশ্বর সমস্ত পৃথিবীকে আলোকিত করেন। তিনি অপরাজেয় এবং মৃত্যুহীনও তিনি এই জগতের সৃষ্টিকারী।”


১০. যজুর্বেদ সংহিতা -৩২.১১

“ঈশ্বর যিনি বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সকল কিছুর মধ্যে তিনি অধিষ্ঠিত।”


১১. ঋগবেদ সংহিতা -১০.৪৮.১ “ঈশ্বর যিনি সর্ব্বত্রই ব্যাপ্ত আছেন।”


১২. শ্রীমদভগবদগীতা-১৮/৬১

“ঈশ্বর সকল ভূতপ্রাণীর হৃদয়ে বাস করেন।” 


দেব-দেবী কারা ?

মনে রাখতে হবে দেবদেবীগণ ঈশ্বর নন। ঈশ্বরকে বলা হয় নির্গুণা অর্থাৎ জগতের সব গুনের(Quality) আধার তিনি। আবার ঈশ্বর সগুনও কারণ সর্ব শক্তিমান ঈশ্বর চাইলেই যে কো্নো গুনের অধিকারী হতে পারেন এবং সেই গুনের প্রকাশ তিনি ঘটাতে পারেন। দেব দেবীগণ সেই ঈশ্বরের এই সগুনের প্রকাশ।অর্থাৎ ঈশ্বরের এক একটি গুনের সাকার প্রকাশই দেবতা। ঈশ্বর নিরাকার কিন্তু তিনি যে কোন রূপে সাকার হতে পারেন, আমাদের সামনেই কারণ, তিনি সর্ব ক্ষমতার অধিকারী। যদি আমরা বিশ্বাস করি ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, তাহলে নিরাকার ঈশ্বরের সাকার গুনের প্রকাশ খুবই স্বাভাবিক।

তাই, ঈশ্বরের শক্তির সগুন রূপ- কালী, নবদুর্গা, কার্তিক ইত্যাদি।
বিদ্যা-সিদ্ধির সগুন রূপ- সরস্বতী, গণেশ ইত্যাদি।
ঐশ্বর্যের সগুন রূপ- লক্ষ্মী, কূবের ইত্যাদি।
মৃত্যুর সগুন রূপ- কালভৈরব, ভূতনাথ, যম ইত্যাদি।
তেমনি ঈশ্বর যখন সৃষ্টি করেন তখন ব্রহ্মা (দেব)
যখন পালন করেন তখন বিষ্ণু (দেব)
আর প্রলয়রূপে শিব (দেব)
তিনি যখন আলোপ্রদান করেন তখন তিনি- সূর্য ও চন্দ্র
তিনি আবার পঞ্চ ভূত- ক্ষিতি, অপ, মরুৎ, বোম, তেজ
এই ভাবে নিরাকার ঈশ্বরের সাকার গুনের প্রকাশ হয়।

ঐতরেয় উপনিষদ ১.১ তে বলা আছে-
“সৃষ্টির পূর্বে একমাত্র পরমআত্মা ছিল এবং সবকিছু ঐ পরমআত্মার মধ্যে স্থিত ছিল, সেই সময় দৃশ্যমান কিছুই ছিলনা। তখন পরমআত্মা স্বয়ং চিন্তা করলেন, আমি, আমি হইতে এই জগৎ নির্মাণ করব”
এর জন্য বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু আছে সবই এক ঈশ্বরের অংশ। আর এই এক-একটি অংশ হল এক-একটি
দেব-দেবী।

হিন্দুধর্মের ঈশ্বর উপলব্ধি 

অন্য ধর্মের লোকেরা সনাতন দর্শন সম্পর্কে না জেনেই মূর্তি পূজা দেখে মন্তব্য করে বসেন হিন্দুরা পৌত্তলিক। কিন্তু সঠিক দর্শন জানলে তাঁদের এ ভুল ধারনা ভাঙবে। আগেই বলেছি আমাদের দেবতা অনেক কিন্তু ঈশ্বর এক। ঈশ্বরের কোন প্রতিমা নেই। দেবতারা হলেন ঈশ্বরের এক একটি রূপের বা গুনের প্রকাশ। মূর্তি বা প্রতিমা হল সে সকল গুনের প্রতীক, চিহ্ন বা রূপকল্প। সব ধর্মেই এমন রূপকল্প, চিহ্ন বা প্রতীক আছে, যা তাঁদের কাছে পবিত্র। যেমন ধরুন খৃস্টানদের গির্জায় মাতা মেরী বা ক্রুশবিদ্ধ যীশুর প্রতিমা থাকে, যার সামনে তাঁরা নতজানু হয়ে প্রার্থনা করে।
আবার মুসলিমরা কাবাশরীফের কালো পাথরকে পবিত্র মনে করে চুম্বন করে কিংবা কোন কাগজে আরবিতে আল্লাহ লেখা থাকলে তাকে সম্মান দেয়, তাকে যেখানে সেখানে ফেলে দেয় না।
তাহলে ঐ কাগজখানা কি আল্লাহ নিজে?  না । কিন্তু তারপরও তাকে সম্মান করে কারণ তা আল্লাহ নাম, ওটা দেখে আল্লাহর কথা মনে আসে, তার প্রতি ভালবাসা প্রকাশ পায়, হিন্দুদের ক্ষেত্রে ঠিক এমনি হয়। কেউ কেউ শুণ্য পানে চেয়ে প্রার্থনা করে। তাহলে কি ঐ শুণ্য পানে ঈশ্বরের বসতি ? আসলে তা নয়। আমি আগে বলেছি ঈশ্বর সর্বস্থানে বিরাজমান।


Share:
Powered By Blogger

Categories

লেখক

সুমন চন্দ্র বর্মন (সাগর)
অনার্স, এম এ (ইতিহাস)
টাংগাইল, ঢাকা, বাংলাদেশ।