হিন্দুধর্মের আলো,এই ব্লগ সাইটটি হিন্দু (সনাতন) ধর্মের একটি পুর্নাঙ্গ ওয়েব পোর্টাল গড়ার প্রচেষ্টায় কাজ করছে। এই সাইটের মূল উদ্দেশ্য হলো হিন্দুধর্মের প্রচার। এই ব্লগ সাইটটি হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্র সম্পর্কিত বিভিন্ন মন্ত্র, বিভিন্ন পূজা-অর্চনা, আরতি, ধ্যান,দশবিধ সংস্কার, তিলক,আরাধনা,বিভিন্ন ব্রত পালনসহ বিস্তারিত জানতে পারবেন।এই সাইটি বড় তথ্যের ভান্ডার করতে কিছু পোস্ট ফেসবুক ও ব্লগ থেকে সংগ্রহ করা হয়ে। এই ব্লগ পোস্ট সমূহ নিয়মিত শেয়ার করে হিন্দুধর্ম প্রচার বৃদ্ধিতে সাহায্য করবেন।

  • This is default featured slide 1 title

    Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

  • This is default featured slide 2 title

    Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

  • This is default featured slide 3 title

    Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

  • This is default featured slide 4 title

    Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

  • This is default featured slide 5 title

    Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

ত্রিসন্ধ্যা: মুসলমানরা নামাজ পড়েন, আপনি হিন্দু কি করবেন জানুন?

মুসলমানরা নামাজ পড়েন তাহলে হিন্দুধর্মের কি এরকম উপাসনার বিধি আছে?

এটা কখন ও কেমন করে করা হয়? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজচ্ছেন?

উত্তর: হ্যাঁ,হিন্দুধর্মে এরকম উপাসনার বিধান আছে। প্রতিদিন তিনবেলা উপাসনা। হিন্দুধর্মে উপাসনাকে বলে 'ত্রিসন্ধ্যা'। এটি সূর্যের তিন অবস্থানের কালে করা হয়।

ত্রিসন্ধ্যা করার সময়:
প্রথম পদ/ সূর্যোদয় কাল — বিস্তার ২ মুহূর্ত (সূর্যোদয়ের আগের ৪৮ মিনিট + সূর্যোদয়ের পরের ৪৮ মিনিট)। নাম - প্রাতঃসন্ধ্যা।
অর্থাৎ সূর্যোদয়ের ৪৮ মিনিট আগে থেকে সূর্যোদয়ের পরের ৪৮ মিনিট সময় পর্যন্ত হলো ১ম সন্ধ্যা।

দ্বিতীয় পদ/ মধ্যাহ্ন কাল — ২ মুহূর্ত সূর্য মাথার ওপর আসার আগের ৪৮ মিনিট + সূর্য মাথার উপর আসার পরের ৪৮ মিনিট)। নাম - মধ্যাহ্ন্যিক।
অর্থাৎ সূর্য মাথার উপর আসার  ৪৮ মিনিট আগে থেকে সূর্য মাথার উপর আসার পরের ৪৮ মিনিট সময় পর্যন্ত হলো ২য় সন্ধ্যা।

তৃতীয় পদ/ সূর্যাস্ত কাল — ১ মুহূর্ত (সূর্যাস্তের পরের ৪৮ মিনিট)। নাম – সায়ং সন্ধ্যা।
অর্থাৎ  সূর্য ডোবার পরে ৪৮ মিনিট সময় পর্যন্ত হলো ৩য় সন্ধ্যা।
(কাল অতীত হলে, অধিক অর্ঘ্য দান করতে হবে। কিন্তু এক বেলার সন্ধ্যা অন্য বেলায় বা তারও পরে করা যাবে না।)

ত্রিসন্ধ্যা কিভাবে এসেছে?
প্রথমে জানা যাক এই সন্ধ্যা বন্দনম্ আসলে কী?
বহুকাল আগে, সৃষ্টির প্রথমদিকে, সূর্যদেব দেখেন যে জগৎ সংসারের সমস্ত কিছুই অশুরের অন্ধকার করাল গ্রাসে চলে যাচ্ছে। এবং তিনি তার আলো এবং শক্তি দিয়ে সব রক্ষা করার চেষ্টা করতে শুরু করেন এবং ভগবান ব্রহ্মা কাছে সমাধান জানতে চান। তাতে প্রজাপতি ব্রহ্মা উত্তর দেন, “হে সূর্য নারায়ণ, তুমি পরমেশ্বর ভগবান শ্রী বিষ্ণুর রূপ, তুমি নিয়ত তাদের এভাবে রক্ষা করে যাবে। এবং মানুষ, দেবতা সকলেই তোমাকে তিন বার অর্ঘ্য দানের মাধ্যমে শক্তি দিয়ে যাবে।”

সেই নিয়ম অনুযায়ী, আমরা কি ভগবান ব্রহ্মা নিজেও ত্রিসন্ধ্যা পালন করে থাকে। ঋগ্বেদের পুরুষ সুক্তে এবং অন্য অনেক স্থানে এর উল্লেখ আছে।


ত্রিসন্ধ্যা বা নিত্য কর্ম করার নিয়মঃ
১। সূর্যোদয়ের ৪৮ মিনিট আগে থেকে সূর্যোদয়ের পরে ৪৮ মিনিট সময় পর্যন্ত সময় করতে হয়।(একে বলে ব্রাহ্ম মুহুর্তে উঠা) ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে যাদের দীক্ষা হয়েছে তারা গুরু স্মরণ করে গুরু প্রদত্ত মন্ত্র এবং হরিনাম মহামন্ত্র জপ করবেন।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।|
কমপক্ষে ১০৮ বার করে এবং  যতবার খুশি জপ করবেন ও ঈশ্বরের স্মরণ ও মনন করবেন। এটা হল ১ম (সন্ধ্যা) বা প্রাতঃসন্ধ্যা। এটা সূর্য উঠার আধ ঘণ্টা পর পর্যন্ত চলতে পারে।তাঁর রূপকে চিন্তা করাকেই বলে ধ্যান।

২। এভাবে স্নানের পর দুপুরে  অর্থাৎ সূর্য মাথার উপর আসার  ৪৮ মিনিট আগে থেকে সূর্য মাথার উপর আসার পরের ৪৮ মিনিট  পর্যন্ত সময়ে একইভাবে কমপক্ষে ১০৮ বার করে যতবার পারবেন জপ করবেন।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।|
এভাবে ঈশ্বরের নাম করা ও তাঁর স্মরণ করা হল
২য় সন্ধ্যা বা মধ্যাহ্ন্যিক।

৩। এভাবে সূর্যাস্তের পর থেকে ৪৮ মিনিট সময় পর্যন্ত ৩য় সন্ধ্যা বা সায়ং সন্ধ্যা করতে হয়। অর্থাৎ সন্ধ্যা আরতির সময় করা বেশী উত্তম।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।|
একই ভাবে ১০৮ বা অধিক বার তাঁর নাম জপ ও তাঁকে স্মরণ করতে হবে। এটি হল ৩য় সন্ধ্যা।


এভাবে ত্রিসন্ধ্যা করা একান্ত কর্তব্য (এছাড়াও শোবার সময় উঠার সময় হাই তোলার সময়, হাঁচি, কাশিতে সর্বদা তাঁর নাম করতে হয়)। মনে রাখতে হবে ঈশ্বরকে মহিলা, পুরুষ, আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা, শরীরের যে কোন অবস্থায় যে কোন কালে, যে কোন স্থানে এমনকি বাথরুমেও তাঁর নাম মনে মনে করবেন।
 কারণঃ
শ্রীমদ্ভাগবত গীতার ৮/৫ শ্লোকে আছে-
অন্তকালে চ মামেব স্মরণ মুক্তা কলেবরম্
য়ঃ প্রয়াতি স মদ্ভাবং য়াতি নাস্ত্যত্র সংশয়ঃ ।।
অর্থাৎ মৃত্যুকালে বা দেহত্যাগকালে যে ঈশ্বরকে স্মরণ করে বা তাঁর নাম করে সে আমার ভাব অর্থাৎ ঈশ্বরকে প্রাপ্ত হয় বা ঈশ্বর লাভ করে। মৃত্যু মানুষকে যে কোন সময় গ্রাস করে, বলে কয়ে আসে না। তাই যে কোন স্থানে দেহের যে কোন অবস্থায় মন্দিরে-শৌচালয়ে যে কোন স্থানে তাঁর নাম করা কর্তব্য।
তাই সর্বদা এমনকি শৌচ কালেও ঈশ্বরকে মনে মনে ডাকা (জপ) স্মরণ (ধ্যান) করা যায়। সুতরাং যাদের দীক্ষা হয়েছে তারা তার গুরু নির্ধারিত ইষ্ট মন্ত্র জপ করবেন। যাদের দীক্ষা হয়নি তবুও তারা ঈশ্বরের যে কোন নামে জপ করতে পারে।
সঙ্গে গায়ত্রী মন্ত্র জানা থাকলে সেটি পারলে জপ করা যায়।

গায়ত্রী মন্ত্রঃ
ওঁ ভুঃ ভুবঃ স্বঃ তৎ সবিতুর্ বরেণ্যং ভর্গদেবস্য
ধীমহি ধিয়ো ইয়েনঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ।
গায়ত্রীর অর্থঃ ভুঃ ভুবঃ স্বঃ অর্থ- স্বর্গ, মর্ত্য, অন্তরিক্ষ ব্রহ্মাণ্ড যাঁর থেকে উৎপন্ন হয়েছে সেই জ্যোতির্ময় পরমাত্মার ধ্যান করি, আমাদের বুদ্ধি (মতি) পরমাত্মার দিকে পরিচালিত হউক।

সর্বদা জানবেনঃ পূজার চেয়ে নামজপ বা নাম করা বড় তাঁর চেয়ে ঈশ্বরের ধ্যান করা আরো বড়। তাই জপ, ধ্যান অবশ্যই কর্তব্য। তবে বিশেষ দিনে পূজা করা কর্তব্য। জপ ধ্যান সর্বদা কর্তব্য।

তাছাড়াও শয়নকালে বা উঠার সময়, হাঁচি, কাশি, হাইতোলা যে কোন সময় যে কোন কর্মের শুরুতে ও শেষে তাঁর নাম করা কর্তব্য। যেমন- গা মোড়াবার সময় রাম রাম, হরিবোল, দুর্গা দুর্গা, হরে রাম হরে কৃষ্ণ ইত্যাদি। তাকে হরি ওঁ তৎ সৎ নামেও ডাকা যায়। আমাদের নিজ নিজ ব্যবসা ক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্র ও যানবাহনে চলাচলে সর্বত্র বসে বসে বা হাটতে হাটতে ত্রিসন্ধ্যার সময় হলে মনে মনে ঈশ্বরকে ডাকতে পারি  বা নাম করতে পারি।

Share:

হিন্দুরা কেন গরুর মাংস খায় না?

হিন্দুরা কেন গো-মাংস খায় না /
গো-মাতা কেন সনাতন ধর্মে পূজনীয় ??



উত্তরঃ
আমরা হিন্দুরা নানান জায়গায়
অহিন্দুদের কাছ থেকে এই একটি প্রশ্নের
সম্মুখীন হই , তাহল আমরা গরুর দুধ খাই
ঠিকই, কিন্তু মাংস খাই না কেন??

আসুন এবার জানা যাক সনাতন ধর্মে গো
মাতা সম্পর্কে কি বলা হয়েছে>>>

পবিত্র বেদে সাত ধরণের মাতার কথা
উল্লেখ করা হয়েছে।তারা হলেন :

বেদ মাতা
ধরনী মাতা
গো মাতা
রাণী মাতা
ব্রাহ্মণ মাতা
গুরুদেবের স্ত্রী মাতা
নিজের আপন মাতা।

আমরা কিন্তু আমাদের আপন জন্মধাত্রী
মায়ের দুধ পান করতে পাড়ি , তাই বলে
কি আপন মায়ের মাংস ভক্ষন করতে
পাড়ি??

না কখনই পাড়ি না। শাস্ত্র মতে এই ৭ জন
মাতার মধ্যে গো-মাতা একজন ।
তাই আমরা গো মাতার দুধ পান করতে
পাড়ি কিন্তু মাংস ভক্ষন করতে পাড়ি না।
আর তাছাড়া গো মাতা পরমেশ্বর ভগবান
শ্রীকৃষ্ণের অতিব প্রিয়।ভগবান কৃষ্ণ তাঁর
বাল্যকালের লীলা বিলাস এই গো-
মাতাদের সাথে করেছিলেন ।
তাছাড়া বেদে গোহত্যা এবং গোমাংস
খাওয়া সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ।
সুতরাং গো মাতা হত্যা ও তাঁর মাংস
ভক্ষন করা আমাদের ধর্মে নিষিদ্ধ । গো
মাতাকে রক্ষা করাই আমাদের ধর্ম ।
কতিপয় কিছু হিন্দু আছে যারা সনাতন
শাস্ত্র সম্পর্কে কিছুই জানে না । যার
জন্য তারা অহিন্দ বন্ধুদের সাথে থেকে
আরামছে গো মাংস ভক্ষন করে ।
আর সেই সকল কুলাঙ্গার হিন্দুদের জন্য
অন্যান্য হিন্দু রা প্রশ্নবিদ্ধ হয় ।
তাই পোস্ট শেয়ার করুন যাতে সকল
সনাতনীরা জানতে পারে।

হিন্দু শ্রাস্ত্র বেদ নির্ভর। বেদ হলো ইশ্বর বাক্য। যা অলঙ্ঘনীয়। বেদ ঈশ্বর প্রদত্ত আদেশ নির্দেশনা কি করে জীবন আচরণ করবো তা মুলত স্মৃতি দ্বারা বুঝা য়ায়।।

প্রথমে আসি বেদ কি বলে?
প্র নু বোচং চিকিতুষে জনয়া,মা গামনাগা মদিতিং বধিষ্ট।।(ঋগবেদ ৮/১০১ / ১৫।)
অর্থাৎ  ঈশ্বর বলছেন, আমি জ্ঞানবান কে বলছি যে তোমারা নিরপরাধ গো জাতিকে হত্যা করো না।।
এখন তথাকথিত বুদ্ধি জীবিরা বলবে এখানে হত্যা করতে নিষেধ করছে। খেতে তো নয়! আরে ভাই যাকে কাটা যাবে না তাকে খাবার তো প্রশ্ন আসে না। বেদের এই বাক্যর পূর্ন ব্যাখ্যা আছে স্মৃতি তে। যা আমাদের আদি পিতা মনু ও বাকী ১৮ জন বেদবিদ মহর্ষি গণ দ্বারা ব্যাখ্যা করা।।

আসুন দেখি কি বলে স্মৃতি-
ব্রক্ষহত্যা সুরাপানং স্তেয়ং গুর্ববঙ্গনাগমঃ।
মহান্তি পাতকান্যাহুঃ সংসর্গশ্চাপি তৈঃ সহ।।
মনু।

অর্থাৎ  ব্রাম্মহত্যা (মানুষ ও গো হত্যা),মদ পান,চৌর্য, কন্যা,মাতৃ স্থানীয় নারী সংঙ্গম এই চারটি মহাপাতক। যারা এই কর্ম করে তাদের সাথে বাস করা শয়ন উপবেশন করলে সেও মহা পাপী।। তাই বলা যায় গো হত্যা নিষেধ।।

এবার আসি গোমাংসভোজী হলে কি করতে হয়?
গোমাংস ভক্ষনে প্রাজাপত্যং চরেদিতি।।
সমন্ত স্মৃতি।। অনিচ্ছা পূর্বক গো মাংস একবার ভক্ষনে প্রজাপত্য ব্রত করিবে।
গো অশ্ব বারহ কুন্জারোষ্টী চ সর্বং পন্চনখ তথা।।
ক্রব্যাদং কুক্কুটং গ্রাম্য কুর্যাৎ সংবৎসর ব্রতমিতি।।
শঙ্খ সংহিতা।। গরু, অশ্ব, শুকর, হাতি গ্রাম্য কুক্কুটাদি মাংস ভোজন করলে সম্বৎসর ব্রত করিবে।।
 সুতরাং এখানে স্পষ্ট বুঝা যায় কোন কোন মাংস আমাদের খাওয়া যাবে না।।
যেহেতু বেদ ও স্মৃতি দুই গো হত্যা ও খাওয়া নিষেধ। তাই আমরা হিন্দুরা গো মাংস খাই না।।

 আর কেউ যদি গো ঘাতক হয় তার শাস্তি কি?
যদি নো গাং হংসি যদ্যশ্বং যদি পুরুষম।।
তং ত্বা সীসেন বিধ্যামো যথা নোহসো অবীরহা।।(অর্থববেদ ১/ ১৬/ ৪)
আর তুমি যদি আমাদের গরু অশ্ব ও প্রজাদিগকে হিংসা করো বা হত্যা করো তবে তোমাকে সীসা দ্বারা বিদ্ধ করিব। আমাদের সমাজের মধ্যে যেন বীরদের বিনাশকারী কেহই না থাকে।। এখানে বলা হচ্ছে যদি কেউ গো ও মানব হত্যা করে ইচ্ছা করে তাকে সীসা বিদ্ধ করতে।।

গরুকে  হিন্দুরা কিরুপে দেখে?
ছোট বেলায় বাড়ীর মা, ঠাকুরমাগন খুব ভোরে ঘুম থেকে গরু ঘরের গোবর ঘটিতে নিয়ে পরিস্কার জলে গুলে তা বাড়ী আঙ্গিনায় ছিটাতেন, পূজো কিংবা সন্ধ্যা আহ্নিকের জায়গা গোবর মিশানো জল ছিটানো কিংবা ঘরের ভিটি লেপন করতেন,আসলে গোবর জল ছেটাবার জন্যই পোকামাকড় এর উপদ্রব কম হয়। প্রাচীন আর্যঋষিদের ভাবনা নির্দেশনা হলেও আধুনিক বিজ্ঞানে প্রমানিত সত্য হিসাবে প্রকাশ পাচ্ছে। গাভী বিষ্ণুর বাহন, ষাড় শিবের বাহন এবং গোজাতি হত্যা মহাপাপ। পৃথিবীতে সম্ভবত গো-জাতিই একমাত্র প্রাণী যা খায় ঘাষ, দেয় দুধ, মল ও মুত্র ত্যাগের মাধ্যমে প্রকৃতিতে তথা আমাদেরকে দেয় জৈব সার ও জীবানু নাশক উপাদান। সম্ভবত একসঙ্গে এধরনের একাধিক উপযোগীতা পৃথিবীর অন্য কোন পশুকুলের মধ্যে দেখা যায় না। কৃষি সভ্যতার শুরু থেকে গরুই একমাত্র প্রানী যা মানুষকে কোটি কোটি বছর অবধি চাষের ভূমি কর্ষন করে সহজে অধিক ফসল ফলাতে সাহায্য করেছে।এত উপকারী একটি প্রাণী কে মা বলে সম্মান জানানো কেন যায়না এটাই বোধগম্য নয়।

গরু হিন্দুদের মা,গরুর পেট থেকে তো গরুর বাচ্চা হয় মানুষের বাচ্চা তো হয়না তাহলে গরুকি করে মানুষের মা হয়?
উঃ গরু হিন্দুদের মা এটা কোন গ্রন্থে বলা আছে কী? অতি সুপ্রাচীনকাল হতে ভারতবর্ষের অনেক রাজা-মহারাজার গোপালন করতেন। মহাভারতে বর্ণিত, বিরাট রাজার ষাট হাজার গাভী ছিল। কে কত বেশী ধনশালী ও সমৃদ্ধশালী তা ঐ রাজ্যের গোশালা ও গরুর সংখ্যার উপর নির্ভর করতো। আইন-ই-আকবরী পাঠে জানা যায়, মুঘল সম্রাট আকবরেরও শতশত গাভী ও বলদ ছিল। তিনি মুসলমান হয়েও ভারতবর্ষে গোহত্যা নিষিদ্ধ করেছিলেন।

এখন আসি গরুর মাংস খাই না কিন্তূ চামড়ার জুতা কেন পড়ি?
উঃ চামড়ার তৈরী জুতা পরা আর জবাই করে মাংস খাওয়া দুই ভিন্ন জিনিস। একটা গরুর আয়ুষ্কাল ২০/২২ বছর, এর ভিতরে সে মারা যাবে, আর মরা গরুর চামড়া তুলে নিলে সে নিশ্চই আবার মারা যাবে না এবং কষ্টও পাবে না, সুতরাং চামড়ার তৈরী জিনিস পরা আর এর মাংস খাওয়া কখনো এক হতে পারে না, এবং চামড়ার তৈরী জুতা পরা ও দোষের কিছু না ।
আমরা কুমিরের মাংস কেউ খাই না কিন্তূ এর চামড়ার তৈরী জিনিস ব্যবহার করি যা খুবই বেয়বহুল ।

গরুর চামড়া অপবিত্র । অথচ গোচর্মের তৈরি মৃদঙ্গ বৈষ্ণবরা ব্যবহার করেন কেন ?
উত্তর: বহু জিনিস অপবিত্র হলেও বেদ নির্ধারিত বিশেষ বিশেষ দ্রব্য পবিত্র বলেই গৃহীত হয়। যেমন, চামড়া অপবিত্র, কিন্তু হরিণের চর্মের আসন পবিত্র । অস্থি অপবিত্র, কিন্তু শঙ্খ পবিত্র। দাঁত অপবিত্র, কিন্তু হাতির দাঁত পবিত্র। মরা পাখির পালক অপবিত্র, কিন্তু ময়ূরের পাখা শুদ্ধ পবিত্র।বৃদ্ধ বা অসুস্থ হয়ে কোন গরু মারা গেলে বা কোন দূর্ঘটনায় নিহত গরুর চামড়া হাড়ের ব্যবহার বৈদিক যুগ থেকেই প্রচলিত । বৈদিক ঋষিরা পূর্ব থেকেই মৃত গরুর চামড়া নানা কাজ ব্যবহার করতো । তাই মৃত গরুর চামড়া দিয়ে বানানো জুতা শাস্ত্রবিরোধী নয়।


Share:

হিন্দুধর্মের দশবিধ সংস্কার

হিন্দুধর্মের দশবিধ সংস্কার

আমাদের সনাতন ধর্ম মতে একটি আদর্শ ও পরিপূর্ণ জীবন গড়তে প্রত্যকেই দশবিদ সংস্কার মাঝে সঠিক জীবন গড়তে হবে। আসুন আমরা জেনে নিন এই দশবিদ সংস্কার গুলো কি-

মনুষ্য জীবনকে সুন্দর ও কল্যাণকর করে গড়ে তোলার লক্ষে প্রাচীন ঋষিরা অনেক ধর্মীয় আচার-আচরণ ও মাঙ্গলিক কর্মের নির্দেশ দিয়েছেন। এগুলোকে হিন্দু ধর্মের ধর্মাচার ও সংস্কার বলে।

এই সকল আচার-আচরণ ‘মনুসংহিতা’, ‘যাজ্ঞবল্ক্যসংহিতা’, ‘পরাশরসংহিতা’ প্রভৃতি স্মৃতিশাস্ত্রে পাওয়া যায়। স্মৃতিশাস্ত্রে ১০ প্রকার সংস্কারের উল্লেখ আছে।

১। গর্ভাধান
গর্ভসঞ্চারের মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানকে বলা হয় গর্ভাধান। বর্তমানে এই সংস্কারের অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে।

২। পুংসবন
পুত্র সন্তান কামনা করে যে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান করা হয়, তাকে পুংসবন বলে। গর্ভাধানের মত এই সংস্কারটিও প্রায় হারিয়েই গেছে।

৩। সীমন্তোন্নয়ন
গর্ভধারনের পর ৬ বা ৮ মাসে সীমন্তোন্নয়ন করা হয়। এটি আমাদের সমাজে বর্তমানে সাধ-এর অনুষ্ঠান নামে পরিচিত।

৪। জাতকর্ম
জন্মের পর পিতা জব , যষ্টিমধু ও ঘৃত দ্বারা সন্তানের জিহ্বা স্পর্শ করে মন্ত্রোচ্চারণ করার মাধ্যমে জাতকর্ম সংস্কারটি পালন করা হত। এটিও আজকাল আর তেমন পালন করা হয় না।

৫। নামকরণ
সন্তান ভূমিষ্ঠ দশম, একাদশ, দ্বাদশ ও শততম দিবসে নামকরণ করণীয়।

৬। অন্নপ্রাশন
পুত্রের ৬ মাসে এবং কন্যার ৫, ৮ বা ১০ মাসে প্রথম অন্নভোজনের নাম অন্নপ্রাশন।

৭। চুড়াকরণ
গর্ভাবস্থায় সন্তানের মস্তকে যে কেশ উৎপন্ন হয় তা মুণ্ডনের নাম চূড়াকরণ। বর্তমানে চূড়াকরণের কাজটি অন্নপ্রাশনের দিন-ই করে ফেলা হয়। তাই এই অনুষ্ঠানটিও এখন আর আলাধা করে করা হয় না।

৮। উপনয়ন
‘উপনয়ন’ শব্দের অর্থ ‘নিকটে নিয়ে যাওয়া’। যে অনুষ্ঠানের পর ছাত্রকে বিদ্যাশিক্ষার জন্য গুরুর নিকটে নিয়ে যাওয়া হত তার নাম ছিল উপনয়ন। উপনয়ন শব্দের সহজ অর্থ যজ্ঞপবীত বা পৈতা ধারণ। বর্তমানে এই উপনয়ন সংস্কারটি আমাদের সমাজে ভিন্ন রূপে আছে। আগের মত আজকাল আর গুরুগৃহে বিদ্যাশিক্ষার জন্য প্রেরন না করা হলেও শিক্ষা জীবনের শুরুতে হাতেখড়ি বলে একটি অনুষ্ঠান আজও প্রচলিত আছে যেটা কিনা সাধারনত সরস্বতী পুজোর সময় করা হয়।

৯। সমাবর্তন
প্রাচীনকালে পাঠ শেষে গুরুগৃহ থেকে নিজগৃহে ফিরে আসার সময় যে অনুষ্ঠান হত তাকে সমাবর্তন বলা হত। এটি আজকাল আর গৃহে প্রচলিত না থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজও প্রচলিত আছে। বরং এটি এখন ধর্মের সংস্কারের গন্ডি পেরিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বৃহৎ রুপ পেয়েছে।

১০। বিবাহ
যৌবনে দেব ও পিতৃ পুজার মাধ্যমে নারী-পুরুষের মিলনের যে অনুষ্ঠান করা হয় তাকে বিবাহ বলে। স্মৃতিশাস্ত্রের ১০ টি সংস্কারের মাঝে এই সংস্কারটির অস্তিত্বই সবচে প্রকট।আজও সেই পূর্বেই মতই সকল আচার-আচরণ, বিধি-বিধান মেনেই বিবাহের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়।
Share:

হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র অর্থ ও ব্যাখা

হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র অর্থঃ


হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রটি ৩টি শব্দ দ্বারা গঠিত। শব্দ ৩টি হচ্ছে যথাক্রমে (১) হরে , (২) কৃষ্ণ ও (৩) রাম।

১.হরে শব্দটি সংস্কৃত "হরা" শব্দ থেকে এসেছে যা দ্বারা শ্রীমতি রাধারাণীকে সম্বোধন করা হয় । রাধারাণী ভগবানের পরম আনন্দময়ী শক্তি । সৃষ্টির আদিতে পরমেশ্বর ভগবান তার নিজের সেবা ও ভক্তসঙ্গ লাভের জন্য শ্রীমতি রাধারাণীকে তার হৃদয়ের বামপাশ থেকে সৃষ্টি করেছেন । কাজেই রাধারাণীর অনুমতি ব্যাতীত কোন মানুষ এমনকি দেবতারাও ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে লাভ করতে পারে না ।

২. কৃষ্ণ শব্দ দ্বারা সর্বাকর্ষক শ্রীকৃষ্ণকে অর্থাৎ পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বুঝায় । তিনিই সর্বপ্রথম এবং সর্বাদিরূপ । তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন , তাকে কেউ সৃষ্টি করেনি ।

৩. রাম শব্দ দ্বারা সর্ব আনন্দদায়ক শ্রীমান "বলরামকে" বুঝায় । বলরাম বৃন্দাবনে সবার অন্তরে আনন্দ সঞ্চার করেন । বলরামকে আমরা ভগবানের লীলা অবতাররূপেও দেখতে পাই ।

'হরে কৃষ্ণ' মহামন্ত্রের সঠিক অর্থ হচ্ছেঃ
হে সর্বাকর্ষক পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, হে সর্বানন্দদায়ক ভগবান শ্রীবলরাম, আপনারা আমাকে কৃপাপূর্বক আপনাদের চিন্ময় জগতের (Chinmoy Plannet) প্রেমময়ী সেবায় নিয়োজিত করুন ।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।

'হরে কৃষ্ণ' মহামন্ত্র ষোলো নাম বত্রিশ অক্ষর রুপী। কিন্ত নামকীর্ত্তন বা জপ করতে যেয়ে আমরা পাই মাত্র তিনটি নাম 'হরে', 'কৃষ্ণ' ও 'রাম'। পরমকরুনাময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ অর্থাৎ সৎ, চিৎ ও আনন্দ রুপী ত্রিগুণের অধিকারী। এই ত্রিগুণ হলো সন্ধিনী, সংবিৎ ও হ্লাদিনী বা কর্ম, ঞ্জান ও ভক্তি রুপী। এই ত্রিগুণের অন্তর্গত হরে, কৃষ্ণ ও রাম নামেই অন্তর্নিহিত।

১ হরে - চন্দ্রাবলী,

২ কৃষ্ণ - শ্রীগোবিন্দ,

৩ হরে - প্রেমময়ী শ্রীরাধা,

৪ কৃষ্ণ - বাসুদেব,

৫ কৃষ্ণ - জগন্নাথ,

৬ কৃষ্ণ - বলভদ্র,

৭ হরে - সুভাসিনী,

৮ হরে - সিংহাসন,

৯ হরে - সুদর্শন,

১০ রাম - শ্রীরাধিকা,

১১ হরে - শেষদেব,

১২ রাম - লক্ষ্মী,

১৩ রাম - সরস্বতী,

১৪ রাম - সুভদ্রা,

১৫ হরে - সাবিত্রী এবং

১৬ হরে - রেবতী।

'হরে কৃষ্ণ' মহামন্ত্রের বত্রিশ অক্ষরের তাৎপর্যঃ

০১) ‘হ’- অক্ষরে শ্রীললিতা সখী মস্তকেতে!

০২) ‘রে’- অক্ষরে শ্রীবিশাখা দক্ষিণ বাহুতে!!

০৩) ‘কৃ’- অক্ষরে চম্পকলতা সখীকন্ঠে রয়!

০৪) ‘ষ্ণ’- অক্ষরে চিত্রা সখী বাহুতে শোভয়!!

০৫) ‘হ’- অক্ষরে রঙ্গদেবী সখী থাকে হাতে!

০৬) ‘রে’- অক্ষরে সুদেবী যে থাকয়ে পৃষ্ঠেতে!!

০৭) ‘কৃ’- অক্ষরে তুঙ্গবিদ্যা বদন উপরে!

০৮) ‘ষ্ণ’- অক্ষরে ইন্দুরেখা শ্রবণ বিবরে!!

০৯) 'কৃ’- অক্ষরে শশীরেখা রহে ভুরুযুগে!

১০) ‘ষ্ণ’- অক্ষরে বিমলা সখী ভ্রুর ডান ভাগে!!

১১) ‘কৃ’- অক্ষরে পালিকা সখী ভ্রুর বামে রয়!

১২) ‘ষ্ণ’- অক্ষরে লবঙ্গমঞ্জরী থাকয়ে হৃদয়!!

১৩) ‘হ’- অক্ষরে শ্যামলা সখী নাভীতে থাকয়!

১৪) ‘রে’- অক্ষরে মধুমতী নাভি মধ্যে রয়!!

১৫) ‘হ’- অক্ষরে ধন্যা সখী করাঙ্গুলি রয়!

১৬) ‘রে’- অক্ষরে মঙ্গলা কর অধোমুখী হয়!!

১৭) ‘হ’- অক্ষরে শ্রীদাম সখা জঙ্ঘায় থাকয়!

১৮) ‘রে’- অক্ষরে সুদাম সখা জানু নিবসয়!!

১৯) ‘রা’- অক্ষরে বসুদাম সখা থাকে ভুরু অঙ্গে!

২০) ‘ম’- অক্ষরে অর্জুন সখা সদা থাকে লিঙ্গে!!

২১) ‘হ’- অক্ষরে সুবল সখা দক্ষিণ পদেতে!

২২) ‘রে’- অক্ষরে কিঙ্কিণী সখা আছয়ে বামেতে!!

২৩) ‘রা’- অক্ষরে চাতক সখা পূর্বে নিবসয়!

২৪) ‘ম’- অক্ষরে মধুমঙ্গল অগ্নিকোণে রয়!!

২৫) ‘রা’- অক্ষরে শুক সখা থাকয়ে দক্ষিণে!!।

২৬) ‘ম’- অক্ষরে বিশাল সখা রয় নৈঋত কোণে!!

২৭) ‘রা’- অক্ষরে মহাবল সখা পশ্চিমে থাকয়!

২৮) ‘ম’- অক্ষরে বৃষভ সখা বায়ুকোণে রয়!!

২৯) 'হ’- অক্ষরে দেবপ্রস্থ সখা উত্তরেতে!

৩০) ‘রে’- অক্ষরে উদ্ভব সখা আছে ঈশানেতে!

৩১) 'হ’- অক্ষরে মহাবাহু ঊর্ধ্বে রয় সুখে!

৩২) 'রে’- অক্ষরে ঈশান সখা আছে অধোমুখে!!

'হরে কৃষ্ণ' মহামন্ত্র সম্পর্কে  বিষ্ণু পুরাণে (৬/২/১৭) আরো বলা হয়েছে,
 “এই কলিযুগে ধ্যান, যজ্ঞ বা মন্দিরে অর্চনার কোন প্রয়োজন নেই ৷ কেবলমাত্র শ্রীকৃষ্ণের দিব্যনাম হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে— কীর্ত্তন করার ফলে পূর্ণ আত্মোপলব্ধি অর্জন করা যায় ৷”

কাশীর মায়াবাদী সন্ন্যসী প্রকাশানন্দ সরস্বতী শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে প্রশ্ন করেছিলেন— “সন্ন্যাসী হয়ে বেদ বেদান্ত অধ্যায় চর্চা বাদ দিয়ে কেবল 'হরে কৃষ্ণ' কীর্ত্তণ করে ভাবুকের মতো হীন কর্ম কর কেন? ”

উত্তরে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছিলেন—
মূর্খ তুমি, তোমার নাহি বেদান্তাধিকার ৷
কৃষ্ণমন্ত্র জপ সদা এই মন্ত্র সার ৷৷
কৃষ্ণমন্ত্র হৈতে হবে সংসার মোচন ৷
কৃষ্ণ নাম হৈতে পাবে কৃষ্ণের চরণ ৷৷    (চৈ:চ:আ: ৭/৭২-৭৩)

কলিযুগে ভগবানের নাম হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্ত্তণই একমাত্র ধর্ম ৷
নাম বিনা কলিকালে নাহি আর ধর্ম ৷
সর্বমন্ত্র সার নাম, এই শাস্ত্র মর্ম ৷৷   (চৈ:চ: ১/৭/৭৪)

সকল শাস্ত্রের মূল কথা হল কেবল ভক্তিভরে
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্ত্তণ করা ৷


'হরে কৃষ্ণ' মহামন্ত্রের অন্যতম ব্যাখাঃ 
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
এই মন্ত্রে আটবার হরে, চারবার রাম নাম বলা হয়েছে – তার উদ্দেশ্য কি?
হরি শব্দের অর্থ হরণ, কৃষ্ণ শব্দের অর্থ কর্ষণ ও রাম শব্দের অর্থ রমণ।
 আটবার ‘হরে’ এই নামের দ্বারা ভক্ত কা’কে হরণ করবার জন্য শ্রীভগবানকে আহ্বান করেন?
ভূমিরাপোহনলো বায়ু খং মনো বুদ্ধি রেবচ।
 অহঙ্কার ইতীয়ং মে ভিন্নাঃ প্রকৃতিরষ্টধা ।। ৪
–শ্রীগীতা ৭ অঃ।

–ভূমি, জল, অনল, বায়ু, আকাশ, মনঃ, বুদ্ধি, অহঙ্কার এই অষ্টপ্রকারে বিভক্তা শ্রীভগবানের অপরা প্রকৃতি এই আটটীকে হরণ করবার নিমিত্ত মহামন্ত্রে আটবার এই নাম বলা হয়েছে। পৃথিবীর পাঁচটি তত্ত্ব – শোণিত, মাংস, নাড়ী, ত্বক এবং রোম। জলের পাঁচটী তত্ত্ব – শোণিত, লালা, মূত্র, স্বেদ ও শুক্র। তেজের পাঁচটী তত্ত্ব – ক্ষুধা, তৃষ্ণা, আলস্য, নিদ্রা ও এবং ক্লান্তি। বায়ুর পাঁচটী তত্ত্ব – চলন, বলন, ধাবন, প্রসারণ ও আকুঞ্চন। আকাশের পাঁচ তত্ত্ব – কাম, ক্রোধ, শোক, মোহ ও ভয়। মনের বৃত্তি – সংকল্প বিকল্প।
বুদ্ধির বৃত্তি – নিশ্চয়।
অহঙ্কারের বৃত্তি – অহং কর্ত্তা এই অভিমান। এই ভূমি প্রভৃতি আটটি অপরা প্রকৃতির বহির্মুখতা হরণ করবার জন্যই আটবার ‘হরে’ পদটী মহামন্ত্রে বলা হয়েছে, আট প্রকার প্রকৃতিই মহামন্ত্র জপের দ্বারা ভগবন্মুখী হয়।
চার বার কৃষ্ণ পদের দ্বারা কাদের কর্ষণ অর্থাৎ আকর্ষণের কথা বলা হয়েছে। মন, বুদ্ধি, অহঙ্কার এরা অন্তরিন্দ্রিয় মাত্র। বহির্মুখতা হরণ করলে কার্য্য সিদ্ধি হবেনা, তজ্জন্য এদের কর্ষণও প্রয়োজন। মন, বুদ্ধি ও অহঙ্কার শব্দের দ্বারা চিত্তকেও গ্রহণ করা হয়েছে। ‘রসো বৈ সঃ’ আনন্দময় তাঁর রসতম স্বরূপে মনকে আকর্ষণ করলে মন রসতমের সঙ্কল্প বিকল্পই করবে। বুদ্ধি তাঁকেই নিশ্চয় করে স্থির হয়ে যাবে। অহঙ্কার – আমি কর্ত্তা এই অভিমান ত্যাগ করত – ‘আমি রসময়ের দাস’ এই অভিমান করতে থাকবে, চিত্ত নিয়ত আনন্দময়ের অনুসন্ধানে নিরত হবে। মনোবুদ্ধি চিত্ত ও অহঙ্কারকে আকর্ষণ করবার জন্য মহামন্ত্রে চারবার কৃষ্ণ নাম কথিত হয়েছে।
আর চিরবাঞ্ছিত চারিটী স্থানে রমণ করবেন বলে ভক্ত চারবার রামকে আহ্বান করেন।
জাগ্রৎ, স্বপ্ন, সুষুপ্তি ও তুরীয় এই চার অবস্থাতেই আনন্দময় লীলা করবেন বলে মহামন্ত্রের দ্বারা ভক্ত প্রাণারাম রামকে আহ্বান করে থাকেন – হে প্রিয়তম! তুমি আমার জাগ্রতে স্বপ্নে সুষুপ্তি ও তুরীয়ে রমণ কর। তুমি ভিন্ন যেন কোন অবস্থাতেই আমার আর কোন কিছু গ্রহণীয় না থাকে। তোমার রসে রসিত হয়ে আমি যেন সকল সময় থাক্‌তে পারি। হে রসতম! আমায় অমৃতময় রসময় মধুময় কর।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।

Share:
Powered By Blogger

Categories

লেখক

সুমন চন্দ্র বর্মন (সাগর)
অনার্স, এম এ (ইতিহাস)
টাংগাইল, ঢাকা, বাংলাদেশ।